প্রথম বারের দুর্গাপুজোয় দশভুজার মূর্তিই ছিল বলে কথিত রয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
অসুর নিধনে উদ্যত দেবীমূর্তি নয়। দশভুজা রূপেও দেখা যায় না তাঁকে। বরং দুর্গার মুখাবয়বকেই পুজো করেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রায়পরিবারের সদস্যরা। প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে এমনই রেওয়াজ। এ পুজোয় আরও অভিনবত্ব রয়েছে। বিসর্জনের আগে দোলায় চাপিয়ে দুর্গামূর্তিকে ঘোরানো হয় গ্রামে। বিসর্জনের পর পুকুরপাড় দিয়ে শঙ্খচিল ওড়া দেখে তবেই বাড়ি ফেরেন রায়েরা।
কেতুগ্রামের গোমাই গ্রামে এ পুজো শুরু হয়েছিল ধনী ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায়ের আমলে। অনেকে বলেন, রায়েরা আদতে বর্ধমান জেলার মেমারির বাসিন্দা। প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে সেখান থেকে কেতুগ্রামে বসতি গ়ড়েন গোবিন্দ৷ রায়দের বাড়িতে কেন এমন অভিনব মূর্তিপুজো? এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কথিত, প্রথম বারের দুর্গাপুজোয় দশভুজার মূর্তিই ছিল। তবে পুজো শুরু হতেই সে মূর্তি ভেঙে পড়ে। অবশিষ্ট থাকে কেবল মূর্তির মাথা থেকে গলা পর্যন্ত। এর পর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাটা মুণ্ডর পুজো শুরু করেন গোবিন্দ।
অন্য মতে, গ্রামের বাইরে ঠাকরুন পুকুরে স্নানের সময় গোবিন্দের নজরে আসেন এক অপরূপ সুন্দরী। পুকুরে স্নানরত ওই রমণীর মাথা থেকে গলাটুকুই জলের বাইরে ছিল৷ গোবিন্দর নজর পড়তেই নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যান ওই রমণী৷ পরে স্বপ্নাদেশ হয় গোবিন্দর। দেবীদর্শনের সেই স্মৃতিকে মনে রেখে কাটা মুণ্ডুর পুজো শুরু হয় রায়েদের বাড়িতে।
রায়বাড়িতে ভাগবত পুরাণ মতে পুজো হলেও চণ্ডীপাঠের রীতি নেই। এই পুজোয় অন্নভোগ হয় না। ফল ও লুচির ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। দশমীতে থাকে চিঁড়েভোগের আয়োজন। তবে কুমড়ো, আখ, কলা এবং ছাগবলির প্রথা রয়েছে৷ দিনেরবেলার বদলে আরতি হয় কেবলমাত্র সন্ধ্যায়। নবমীর দিন ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানোর রীতিও রয়েছে। তবে পুজোর বিশেষত্ব রয়েছে দশমীতে। সে দিন দুপুরবেলায় দোলায় চাপিয়ে দুর্গামূর্তিকে সারা গ্রামে ঘোরানোর পর বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন শেষে গোটা গ্রাম-সহ রায়বাড়ির সদস্যদের চোখ থাকে আকাশে। পুকুরপাড় দিয়ে শঙ্খচিল ওড়া দেখে তবেই তাঁরা বাড়ি ফেরেন।