প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
অতিমারিতে আন্তর্জাতিক বিমান অনেক জায়গাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাতে অন্য দেশ থেকে নতুন করে সংক্রমণ কেউ বয়ে না আনতে পারেন, তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। ভারতের মধ্যে এখনও বহু রাজ্যে নেগেটিভ আরটি-পিসিআর রিপোর্ট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ।
তবে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণের হার বেড়েছে। অনেক দেশে সংক্রমণের হারও কমে এসেছে। তাই আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ফের চালু হচ্ছে। কাজে হোক বা বেড়াতে, আগামী কয়েক মাসে যে আন্তর্জাতিক সফর বাড়বে, এমনটাই আশা করছেন বিমান পরিষেবার সংস্থাগুলি।
সেই কারণেই ‘টিকা পাসপোর্ট’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। জেনে নিন এই বিষয়ে।
টিকা পাসপোর্ট কী
বিদেশ সফর করতে হলে বেশির ভাগ মানুষের এখন এটি প্রয়োজন পড়বে। আপনার যে টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে, তার নথি দেখানো আবশ্যিক। সেটাকেই বলা হচ্ছে টিকা-পাসপোর্ট।
কারা চাইছে
এ বছর মার্চে চিন ডিজিটাল টিকা পাসপোর্ট শুরু করে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে এটি ব্যবহার করা যাবে কিউআর কোড স্ক্যান করে। কোনও ব্যক্তির টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে কিনা, নিমেষেই জানা যাবে।
এপ্রিল মাসে জাপান একই ধরনের প্রযুক্তি শুরু করে। মে মাসে ব্রিটেনও একই কথা ঘোষণা করে।
ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের ২৭ দেশের মধ্যে যাতায়াত শুরু করার জন্য একই ধরনের ‘ডিজিটাল গ্রিন সার্টিফিকেট’ শুরু করা হয়। এই সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য নেগেটিভ কোভিড রিপোর্ট বা সদ্য কোভিড সেরে যাওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। তা ছাড়াও কোন কোনও টিকা নিলে এটি মিলবে, তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতীকী ছবি।
ভারতে এ নিয়ে সমস্যা কেন তৈরি হয়েছে
কোভিড-সংক্রমণের হার বিশ্বজুড়ে কমার পর অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পর্যটনের জায়গাগুলি খুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক ভারতীয় বিদেশ সফর করবেন বলেই আশা করা হচ্ছে।
ভারতে আপাতত তিনটি কোভিড-টিকা— কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড এবং স্পুটনিক ভি। বেশির ভাগ মানুষই হয় কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন পেয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু আগেই কোভ্যাক্সিনকে কোনও রকম ছাড়পত্র দেয়নি। এখন ইউরোপের গ্রিন পাস’এ ভারতে তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিষেধক মানে কোভিশিল্ডের নাম টিকা-তালিকায় নেই।
তার মানে কোভিশিল্ড নেওয়া ভারতীয়েরা এই দেশগুলিতে যাওয়ার অনুমতি পায়নি। তবে ইইউ জানিয়েছে, ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের যে কোনও দেশ আলাদা করে টিকা-পাসপোর্টের অনুমতি যে কোনও ব্যক্তিকে দিতে পারে।
সেরাম সংস্থার তরফে আদার পুণাওয়ালা এ বিষয়ে টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করছেন। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কেন কোভিশিল্ড ছাড়পত্র পেল না
অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরেক প্রতিষেধক ভ্যাক্সভেরিয়া গ্রিন পাসের তালিকায় রয়েছে। তবে সেটা তৈরি হয়েছে ব্রিটেনে এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি এটাকে ছাড়পত্র দিয়েছে আগেই। কিন্তু ভারতে তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিষেধক কোভিশিল্ড তা পায়নি। তাই গ্রিন পাসের তালিকায় কোভিশিল্ডের নাম নেই।
প্রতীকী ছবি।
ভারতের অন্য টিকাগুলোর ক্ষেত্রে কী নিয়ম
স্পুটনিক ভি’কে আগেই ছাড়পত্র দিয়েছিল হু। কোভ্যাক্সিন এখনও পায়নি। অনেক দেশে কোভ্যাক্সিন ছাড়পত্র পেলেও ইউরোপ বা আমেরিকা সফর করতে পারবেন না এই টিকা নেওয়া ভারতীয়েরা।
কী ভাবে পাওয়া যাবে টিকা পাসপোর্ট
• প্রথমে কোউইন-এ লগ ইন করতে হবে
• নিজের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলে একটি বিভাগ দেখা যাবে, যার নাম ‘রেইজ অ্যান ইস্যু’
• তার মধ্যে থেকে ‘পাসপোর্ট’ বিভাগটি বেছে নিতে হবে
• তার তলায় ‘পার্সন’ বলে একটি অংশ আসবে
• সেই ‘পার্সন’ বিভাগে ঢুকে গিয়ে পাসপোর্টের নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দিতে হবে
• সব শেষে ‘সাবমিট’ বোতাম টিপে যাবতীয় তথ্য এই অ্যাপের মাধ্যমে জমা দিতে হবে
এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই নতুন শংসাপত্র মোবাইল ফোনে চলে আসার কথা। নতুন শংসাপত্রে পাসপোর্ট নম্বরটিও ছাপা থাকবে। এর ফলে যাঁরা দেশের বাইরে যেতে চান, টিকা সংক্রান্ত জটিলতা তাঁদের অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা।
এই প্রক্রিয়াটি মাত্র এক বারই করা যাবে। তাই পাসপোর্টের নম্বর দেওয়ার সময় খুব সাবধানে কাজটি করতে বলা হয়েছে অ্যাপের তরফে।