College

Campus: অনলাইনে পড়াশোনা সম্ভব হলেও, কলেজ জীবনকে ছুঁয়ে দেখা যায় কি? কী বলছেন পড়ুয়ারা

দীর্ঘ ২০ মাসের অপেক্ষার ইতি ঘটতে চলেছে। ক্যাম্পাস জীবনে ফেরার আনন্দে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কি পড়ুয়ারা?

Advertisement

রিচা রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ২১:৪৫
Share:

অনলাইন ক্লাসে কি কলেজ জীবনের অনুভূতি পাওয়া যায়? ছবি: সংগৃহীত

এক বছর আট মাস পরে খুলতে চলেছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৬ই নভেম্বর থেকে খুলছে রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেলাগাম করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই মূলত একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। আমরা পেরিয়েছি করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউও। স্তব্ধ জনজীবন ছন্দে ফিরছে ধীরে ধীরে। এত দিন অনলাইনে চলেছে পড়াশোনা, পরীক্ষাও। তবে কলেজ মানেই তো শুধু পড়াশোনা, পরীক্ষা আর ডিগ্রি নয়। কলেজবেলার এই সময়টি সারা জীবনের রসদও বটে। এই এক বছর আট মাসে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া কলেজ জীবনের কোন মুহূর্তগুলি সবচেয়ে বেশি মনে পড়েছিল পড়ুয়াদের, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

সিটি কলেজের বি.কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ভাস্বরজিতের কথায় ‘‘যখন কলেজ খোলা ছিল, আমাকে ক্লাসের বদলে খেলার মাঠে বেশি পাওয়া যেত। লকডাউনের কারণে কলেজে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অনলাইনে পড়াশোনা করা গেলেও, বল পায়ে দৌড়নো যায় না।’’

কলেজ জীবনের এই স‌ময়টি রূপকথার মতো। উদ্দাম উত্তেজনায় ভরে থাকে প্রতিটি মুহূর্ত। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকে প্রেম-ভালবাসার গল্প। আর যা-ই সম্ভব হোক, অনলাইনে ক্লাস করে জীবনকে এ ভাবে ছুঁয়ে দেখা যা‌য় না। তাই মনখারাপের সুর জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্রী অনুরিমার গলাতেও, ‘‘ক্যাম্পাসে প্রেম করার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি আছে। গত দু’বছরে সেই অনুভূতি আর পাইনি।’’

Advertisement

বন্দিদশা, সত্যিই অনেকটা বড় করে দিয়েছে ওঁদের। রাগ, অভিমান সবটা গিলে নিতে শিখেছেন সহজেই। প্রেসি়ডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র রাজর্ষি আবার কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন কলেজ ক্যান্টিনে বন্ধুর সঙ্গে প্রবল ঝগড়া করে বাড়ি ফিরেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ফেলে আসা বন্ধুত্বের কাছে ফেরার দিন এগিয়ে আসছে। খুশি? রাজর্ষি বলেন, ‘‘কলেজে গিয়ে প্রথমেই বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরব। তার পর ক্যান্টিনে গিয়ে বেশি দুধ আর চিনি দেওয়া কফি নিয়ে বসব আড্ডায়। কত দিন একসঙ্গে টেবিল বাজিয়ে গান গাওয়া হয়নি।’’

পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চাও হয় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। জন্ম নেয় নতুন গান, নাটক,কবিতারা। অনলাইনে ক্লাস করে ডিগ্রি হয়তো পাওয়া যায়, তবে দল বেঁধে নতুন কিছুর সৃষ্টি হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। কলেজ খোলার খবরে তাই উত্তেজনা ধরা পড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং ড্রামা ক্লাবের সক্রিয় সদস্য স্নেহাশিসের গলাতেও ‘‘আমি তো বাড়ি থেকে ছুটতে শুরু করব। থামব গিয়ে রির্হাসাল রুমের দরজায়। পারলে সে দিনই রির্হাসাল শুরু করে দেব। অনলাইনে হয় নাকি এসব!’’

খুলছে কলেজ, কতটা খুশি পড়ুয়ারা? ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১৬ই নভেম্বর কলেজ খোলা নিয়ে পড়ুয়ারা যেমন উত্তেজিত, পাশাপাশি এই কলেজ খোলার বিষয়টি আদৌও বাস্তবে পরিণত হবে কি না, তা নিয়ে অনেক পড়ুয়াই খানিক সন্দিহান। আবার আশাবাদী ছাত্রদের একাংশের মত, ‘এখন তো সবই প্রায় খুলে গিয়েছে। উৎসবও থেমে থাকেনি। লোকাল ট্রেন বন্ধ ছিল। তাও চলছে। খোলেনি একমাত্র কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তবে সরকার যখন তারিখ ঘোষণা করেছে, আশা করছি এ বার আমরা কলেজে ফিরতে পারব।

তাই কি?

কলকাতার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনই সার্বিক ভাবে অফলাইনে হাঁটার পক্ষপাতী নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে শুধু দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস অফলাইনে শুরু হবে। স্নাতক প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের ক্লাস আপাতত চলবে অনলাইনেই। একই ভাবে, স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রেও শুধু প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলবে অনলাইনেই। খানিক একই ছবি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও। কলা বিভাগের বেশ কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন এই মুহূর্তে তাঁরা অফলাইনে ক্লাস শুরু করছেন না। কিছু দিন করোনা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ভূগোল ও বিজ্ঞান শাখার ক্ষেত্রে খোলা থাকবে ল্যাবরেটরি।

অন্য দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলিও আংশিক ভাবে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সব রকম করোনাবিধি মেনেই চলবে ক্লাস। তবে এখানেই সমস্যার ইতি নয়। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই যেহেতু এখনও ছাত্রাবাস খোলেনি, ফলে কলকাতার বাইরে থেকে পড়তে আসা সব পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ক্লাস করাটা কী ভাবে সম্ভব? এ বিষয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস খোলার কোনও প্রশ্নই নেই। তাই দূরবর্তী ছাত্র ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা আপাতত তাঁদের নিজেদেরকেই করতে হবে।

কলেজের পরিচিত গণ্ডিতে ৬১০ দিন পর ফিরতে পারার খবরে খুশি হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে অফলাইন নাকি অনলাইন এই সংক্রান্ত জট কাটিয়ে উঠে আগের মতো কলেজে ফেরা হবে তো? নাকি ফের এক বার অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে পড়ুয়াদের? কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি? চিন্তিত পড়ুয়ারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement