Relationship Tips

Parenting Tips: গান-বাজনা শেখে সন্তান? তার মনের উপর কী প্রভাব ফেলে এই শিক্ষা

যেমন জোর করে সন্তানকে দিয়ে পড়াশোনার বাইরের একাধিক জিনিস শেখানো উচিত নয়, তেমনই কিছু জিনিস শিখে আনন্দ পেলে একটু বড় হলেই পড়াশোনার দোহাই দিয়ে তার থেকে সেটা কেড়ে নেওয়াও খারাপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘পড়াশোনায় জলাঞ্জলি ভেবে মূর্খ বলছ কি, তোমরা বলছ আমাদের জীবনের চার আনাই ফাঁকি!’ ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র শিশু কণ্ঠের এই গানটি শুনে প্রায় সকলেই মুচকি হেসে ফেলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই একই ভাবে ‘পরকাল ঝরঝরে ভেবে’ দুঃখ করতে করতে বাড়িতে ফিরে একই প্রশ্ন করেন শিশুদের। নাচ-গান-নাটকের শখ বা খেলাধুলোর মধ্যে থাকার প্রবল ইচ্ছেগুলির পাশ কাটিয়ে পড়াশোনাই মূলধন করার উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে প্রায় সব বাড়িতেই। বায়না শুনে ক্লান্ত হয়ে ছেলেমেয়েকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণে ভর্তি করে দিলেন বটে, কিন্তু দশম শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের জুজুবুড়ি এসে কেড়ে নেয় বাকি সব শখ। ওই তিন-চার বছর গান গাওয়ার বা খেলার প্রবল ইচ্ছা দমন করতে হয়। তা থেকে আসে ক্লান্তি। ক্লান্তি থেকে বিতৃষ্ণা। এ রকম করে অনেক ছেলেমেয়েই মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আর ফিরতে পারে না পুরনো শখের জায়গাগুলিতে। মা-বাবার কথা শুনে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে গিয়ে অনেক সময়েই সার্বিক বৃদ্ধির দিক থেকে বঞ্চিত থেকে যায় ছোটরা। যেমন জোর করে সন্তানকে দিয়ে পড়াশোনার বাইরের একাধিক জিনিস শেখানো উচিত নয়, তেমনই কিছু জিনিস শিখে আনন্দ পেলে একটু বড় হলেই পড়াশোনার দোহাই দিয়ে তার থেকে সেটা কেড়ে নেওয়াও খারাপ।

Advertisement

প্রতীকী ছবি।

শুধুমাত্র আনন্দের জন্য নয়, আপনার সন্তানের মানসিক এবং শারীরিক গঠনের জন্যেও পড়াশোনার বাইরেও বিভিন্ন রকমের শিক্ষা লাভ করা প্রয়োজন। তাতে কোন কোন দিক থেকে সন্তানের বেড়ে ওঠায় সুবিধা হতে পারে?

মানসিক সুস্থতা

রোজ ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুল যাওয়া, সেখান থেকে বেরিয়ে টিউশনে যাওয়া, এই করে করে দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শিশুমন। সাড়া সপ্তাহ জুড়ে এ রকমই রুটিন থাকলে যে কোনও বাচ্চার পক্ষেই সামলানো মুশকিল হয়ে যায়। নাচ, বা গান, বা খেলাধুলোর জন্য যদি দিনে খানিকটা সময় বার করে নিতে পারে, তা হলে আপনার সন্তানের মানসিক শান্তি এবং আরামের জন্যেও তা অত্যন্ত কার্যকর হবে। কিছু ক্ষণের জন্য পড়াশোনা থেকে ছুটি, তার উপর অন্য কিছু ভাল লাগার বিষয়ে মন দেওয়া, অনেক সময়েই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটাতে পারে।

আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়

অঙ্ক পরীক্ষায় ভুল করার জন্যে বকুনি খেতে হচ্ছে আপনার সন্তানকে? সব শিশু সমান ভাবে পড়াশোনায় ভাল হতে পারে না। এই থেকে কমতে শুরু করতে পারে আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস। তখন যদি সে দেখে সে গান গাইলে বা নাচ করলে অনেকে প্রশংসা করছেন, তা হলে তার মূল্য ওই ছোট্ট শিশুর কাছে অপরিসীম। সেও যে কিছু একটা কাজ ভাল করে করতে পারে, সেই বোধটা তার আত্মবিশ্বাসের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন দক্ষতার বৃদ্ধি হয়

গান করা বা মঞ্চে অভিনয় করে শুধুমাত্র সকলের মন জয় করাই লক্ষ্য নয়। চরিত্রের গঠনের দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কাজগুলি। সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করা, নেতৃত্ব দেওয়া, কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখা, সময় ঠিক করে ভাগ করা, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোথাও নিজের বক্তব্য রাখা— এই সব দক্ষতাই জীবনের নানা পরিধিতে অত্যন্ত জরুরি। গান, নাচ, থিয়েটার, খেলাধুলো বা অন্য যে কোনও এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে আপনার সন্তান বিভিন্ন বিষয়ে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।

দায়িত্ববান হয়ে ওঠা

এক দিন স্কুলে সারা দিন বিভিন্ন ক্লাস করা, হোমওয়ার্ক করে নিয়ে পরের দিন জমা দেওয়া— সমস্ত কাজই বেশির ভাগ সময়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কিন্তু যখন আপনার সন্তান কোনও খেলার দলের সঙ্গে বা নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হবে, তখন আরও পাঁচ জনের জন্য ভাবতে শিখবে সে। একার কাজেই তার পরিধি সীমিত থাকবে না। তার সঙ্গে জুড়বে একটি গোটা দলের কাজ। তা তাকে আরও দায়িত্ববান হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

স্বাধীনতার ছোঁয়া

স্কুলের কাজকর্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট চৌহদ্দির মধ্যেই থাকে। নিজস্বতা বা স্বাধীনতার স্বাদ সেখানে খানিকটা কম। সেই জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মে অনেক সময়েই একটি নিজস্ব ভাবনা প্রকাশের জায়গা পায় ছোটরা। নতুন জগতে প্রবেশ করে তারা। এই স্বাধীনতা তাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও উদারমনা করে তোলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement