বদলে যাচ্ছে ভাইফোঁটার সংজ্ঞা, ভাইয়ের সঙ্গে বোনও বসছে মিষ্টির থালা সাজিয়ে।
বোনের কপালে দিলাম ফোঁটা...! এ আবার হয় নাকি? দিনটিই তো ভাইদের। বোন ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে ফোঁটা দেবে তার কপালে। তা ঘিরেই আনন্দ, হইচই হবে। এক থালা মিষ্টির সামনে বসে ছবি তুলবে ভাই। এমনটাই তো হওয়ার কথা। এমনই হয়ে এসেছে চিরকাল। কিন্তু সে ছবিতে বদল আসছে। বদলে যাচ্ছে ভাইফোঁটা।
বোনেরাও এখন বসছে মিষ্টির থালার সামনে। ভাই তার কপালে ফোঁটা দিচ্ছে। এ ভাবেও ভাই-বোনের ভালবাসা বিনিময় চলছে। এক কালে যে ভাইফোঁটা ছিল একান্তই পুরুষদের কেন্দ্র করে, তাতে অল্প অল্প করে আসছে বদল। ঢুকে পড়ছে বোনেদের একে অপরের প্রতি ভরসা, অনুভূতি বিনিময়ের রেওয়াজও।
বছর চল্লিশের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অদিতি দেবরায় যেমন চাকরি করতে শুরু করার পর থেকেই ভাইফোঁটার দিন বোনেদের জন্যও উপহার কেনেন। তখন বোনেদের ফোঁটা দেওয়ার চল ছিল না। তাঁরাও দিতেন না। সময়ের সঙ্গে পরিবারের রেওয়াজ বদলেছে। এখন বোনেদের কপালেও ফোঁটা দেন তিনি।
রিনি আর সাত্যকি সবে কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছেন। কলেজেই বন্ধুত্ব। তার পর সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। এখন একে অপরকে ভাই-বোন বলেই মানেন। ভাতৃদ্বিতীয়া তাঁদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সাত্যকি বলেন, ‘‘সব ধরনের সম্পর্কই উদ্যাপন করি তো আমরা। ভাই-বোনের সম্পর্ক উদ্যাপনের দিন তো এটিই। তবে করব না কেন?’’ প্রতি বছর সাত্যকির বাড়িতে থাকে আয়োজন। সেখানেই রিনি সাত্যকিকে ফোঁটা দেন। সাত্যকিও রিনির কপালে ফোঁটা দেন। রিনি বলেন, ‘‘রাখির দিনটিও এ ভাবেই পালন করি আমরা। দু’জনেই দু’জনকে রাখি পরাই।’’
ভাই নেই তো কি, বোনেরা মিলেই পালন করেন এই দিনটি। একে অপরের কপালে ফোঁটা দেন তাঁরা।
ভাইফোঁটার রীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বছর চব্বিশের গবেষক দোলন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এক দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে তাকে ফোঁটা দিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সেও তো আমার মঙ্গল চাইতে পারে। তারও তো আমার কথা ভাবা জরুরি। ভাববে না কেন?’’ একই প্রশ্ন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিতাস মল্লিকের। তিনি বলেন, ‘‘আমি যেমন ভাইকে ভালবাসি, ভাইও তো আমাকে ভালবাসে। তবে একে অপরকে ফোঁটা দিতে অসুবিধা কোথায়?’’
তবে কি ভাইফোঁটার পাট চুকিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা? তা কিন্তু নয়। ভাইফোঁটার আনন্দ আরও বাড়িয়ে তোলার পক্ষে এই বোনেরা। যেমন ধরা যাক বেসরকারি সংস্থার কর্মী পারমিতা মণ্ডল আর জয়ী চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তাঁদের কারওরই নিজের ভাই নেই। কিন্তু বোন আছেন। বোনেরা মিলেই পালন করেন এই দিনটি। একে অপরের কপালে ফোঁটা দেন। খাওয়াদাওয়া, সাজগোজ, উপহার বিনিময়— সবই হয়। রীতিমতো মন্ত্র বলে বলেই ফোঁটা দেন তাঁরা, একে অপরের কপালে।
এ সব শুনে ষাট পেরোনো স্কুল শিক্ষিকা বেশ খুশি। দমদমের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মালা দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘রাখির দিন আমি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রাখি কিনে রাখতাম। শুধু মেয়েরাই ছেলেদের হাতে রাখি বাঁধবে কেন? আমার স্কুলে ছেলেরাও মেয়েদের রাখি পরাত। তা দেখে আগে অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। কিন্তু বহু অভিভাবক আনন্দও পেতেন। এখনকার ছেলেমেয়েরা উৎসব, অনুষ্ঠান পালন নিয়ে নতুন করে ভাবছে। সে কথা শুনেই আনন্দ হচ্ছে।’’