anger

Anger: ভাষা প্রয়োগে সতর্কতাই রাগ দমনের অন্যতম কৌশল, পরামর্শ মনোবিদ অনুত্তমার

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল অষ্টম পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘রাগলে হুঁশ থাকে না।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২২ ২১:০০
Share:

গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ

সকলের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক একটি আবেগ হল রাগ। অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রিপুও। একইসঙ্গে স্বাভাবিকও। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাগের। জীবনের অন‍্যতম একটি অংশই হল রাগ। রেগে গিয়ে দু’চার কথা শুনিয়ে হালকা হওয়া যায় সেটা ঠিক। কিন্তু সবক্ষেত্রে রাগ কিন্তু স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করছে রাগের কারণ ও মাত্রার উপরে। কখনও কখনও দেখতে পাওয়া যায় রাগের বিষয় এবং পরিমাণের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকছে না। বিষয়টি হয়তো খুবই নগন্য। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে যে ঝড় উঠল, তা সাইক্লোনের সমান। এক একজনের ক্ষেত্রে আবার রাগের বহিঃপ্রকাশেও বদল ঘটে। কেউ বেশি সময় ধরে রাগ পুষে রাখেন। আবার কেউ অল্পেতেই শান্ত হয়ে যান।

Advertisement

এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ভাষার প্রয়োগ। রেগে গেলে বশে থাকে না জিভ। অনেক কটু, অপ্রীতিকর কথা, বেঁফাস মন্তব্য থেকে জন্ম নেয় আরও অনেক ছোট ছোট সমস্যা। যার জেরে নষ্ট হয় সম্পর্ক, আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব। রাগের বশবর্তী হয়ে নিজেকে এবং বাকসংযম করতে না পারার সমস্যা নিয়েই রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনে ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোক কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল অষ্টম পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘রাগলে হুঁশ থাকে না।’

রাগ একটি সহজাত প্রবৃত্তি। তবু কোথাও গিয়ে যেন মন ও শরীরের অন্দরে এক গভীর ক্ষত তৈরি করে। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে হল রবিবারের আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যাবে প্রশ্ন। এই পর্বেও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন জানালেন, ছোটবেলা থেকেই এমন একটি পরিবেশে বড় হয়েছেন যেখানে সকলেই কথায় কথায় রেগে যান। এখন তিনি নিজেও অতি অল্পে রেগে ওঠেন। মা-বাবা, বাড়ির কারও কথা সহ্য করতে পারেন না। রাগের মাথায় দু’-এক বার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন। তবে প্রচণ্ড রাগ হলে এখন ছাদে চলে যান। কিছু ক্ষণ একা থাকেন। ধীরে ধীরে কমতে থাকে রাগের তীব্রতা। এই সমস্যার অনুরণন পাওয়া গেল দেবদূতি ঘোষালের প্রশ্নে। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ির লোক জানেন বলে তাঁর রাগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাগের সময়ে তাঁর দিকে কটু কথা, ব্যক্তিগত আক্রমণ এসেছে। সে সময়ে ভীষণ রকম প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাব কাজ করেছে। রাগ দেখাতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করে ফেলেছেন, যেগুলি পরে কষ্ট দিয়েছে মনে। নিজেকে অনেক বার বোঝানোর পরেও রাগ থেকে দূরে থাকতে পারেননি। ছোটবেলায় ফিরে গিয়ে সেই রাগের স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। আজ যদি তা চিহ্নিত করা যায় কিংবা ওই দিনের কোনও রাগ নিজের মধ্যে অবদমিতও থেকে যায়, ফিরে গিয়ে তা পূরণ করে আসা সম্ভব নয়। রাগ একটি নেতিবাচক রিপু। তার পুরোপুরি ক্ষয় সম্ভব নয়। তবে নিজেকে সামাল দেওয়ার উপায় জানতে হবে। আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যে ঘটনা বা স্মৃতি এই মাত্রাছাড়া রাগের কারণ হয়ে উঠছে, সেখানে বারবার ফিরে না যাওয়াই ভাল। তাতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। রাগ শেখার ভাষা পরিবর্তনশীল। চাইলে তা বদলে নেওয়া সম্ভব। বোঝালেন মনোবিদ অনুত্তমা।

এ বার রাগ যদি নিজের মধ্যে এতটা তোলপাড় ঘটাতে সক্ষম হয়, তাহলে তা সামাল দেওয়ার সমাধানও নিশ্চয় থাকবে। রাগ গিলে ফেলাই কি একমাত্র উপায়? এ ব্যাপারে রূপমের প্রশ্নটি বেশ প্রাসঙ্গিক। তিনি জানতে চেয়েছেন, অনেক সময়ে এক রাশ বিরক্তি থেকেও জন্ম হয় রোগের। রাগ হলে তা বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে বার করে দেওয়ার কথা বলেন অনেকে। সেটাই কি মুক্তির একমাত্র উপায়? আবার অনেকে আছেন রেগে গেলে কোনও কথা বলতে পারেন না। কী বলবেন বুঝতে পারেন না।

সাহিত্যের ছাত্রী নীলাঞ্জনাও জানিয়েছেন, যখন কোনও বিষয় বা ব্যক্তির উপর রাগ হয়, তখন কিছু বলতে পারেন না। ভয় পেয়ে যান রাগের পরিণতি নিয়ে। ঘরের দরজা দিয়ে অনবরত কাঁদতে থাকেন। অবসাদ ঘিরে ধরে। মনোবিদ বললেন, ‘‘আসলে রাগ এক এমন আবেগ, যা অন্যের দিকে ধাবিত হলে হয় তাঁকে ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছা করে, আর নিজের দিকে এলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে। মানসিক অবসাদ আসলে নিজের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া রাগ। অন্যকে খারাপ লাগাটা রাগ। নিজের প্রতি তিক্ততা চলে আসা অবসাদ। অন্যকে ধ্বংস করতে না পারলে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মধ্যে একটা বার্তা থাকে। সেখান থেকেই আসে আত্মহননের ভাবনা। কিন্তু সেটাই তো একমাত্র সমাধানের পথ নয়। নিজের বা অন্যের— কারও ক্ষতির উর্ধ্বে উঠে রাগের ভাষা তৈরি করা সম্ভব। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘অ্যাসার্টিভনেস’। যেখানে অন্য কাউকে আঘাত করা উদ্দেশ্য নয়। এই কষ্ট পাওয়া থেকে নিজেকে সামলে নেওয়াই হবে একমাত্র লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement