সিগারেট-বিড়ির অভ্যাসের কারণে অনেক ক্ষতি হতে পারে রোজের জীবনে।
সিগারেট-বিড়ির নেশা যে অত্যন্ত ক্ষতিকর, সকলেই তা জানেন। কিন্তু মানতে চান না। অথচ এই অভ্যাসের কারণে অনেক ক্ষতি হতে পারে রোজের জীবনে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের হিসেবে এ দেশে বছরে ৯,৩০০০০ মানুষ মারা যান স্রেফ সিগারেট টেনে। বিশ্বে প্রত্যেক বছর ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু ধূমপানের কারণে। এ দেশে প্রতি ৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন ধূমপান করেন। ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবী জুড়ে তামাক বিরোধী প্রচার চলছে। ইওরোপ-আমেরিকায় ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু এ দেশে সে সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কিন্তু ধূমপান এত ক্ষতিকর কেন? তা জেনে নেওয়া দরকার। ধূমপানের জেরে কী কী ক্ষতিকর জিনিস ঢুকছে শরীরে? পুরনো কথা আবারও মনে করা দরকার। যাতে ক্ষতিকর অভ্যাস খানিকটা হলেও নতুন ভাবে নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছে হয়। ছোটছোট বদল আনা যায় রোজের যাপনে। ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন—
• সিগারেট-বিড়ির মূল উপাদানে আছে আর্সেনিক, অ্যামোনিয়া, ডিডিটি, অ্যাসিটোন, ক্যাডমিয়াম, নিকোটিন-সহ প্রায় ৭,০০০ বিষাক্ত জিনিস
• সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মোনো-অক্সাইড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা রোগ ডেকে আনে
• মুখ, গলা, ফুসফুস, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ইউরিনারি ব্লাডারে ক্যানসারের এক বড় কারণ সিগারেট- বিড়িতে উপস্থিত এই রাসায়ানিক
• আমাদের দেশে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন, দৈনিক ২২০০ জন এবং বছরে কমপক্ষে ৯.৩ লক্ষ মানুষ মারা যান স্রেফ ধূমপানের কারণেই
• পরোক্ষ ভাবে ধূমপানের শিকার হয়ে বছরে ৬ লক্ষ মানুষ মারা যান। সিগারেট-বিড়িই হোক, কিংবা চুরুট-হুঁকো— সবই সমান ভাবে ক্ষতিকর
• ১টি সিগারেট গড়ে সাড়ে ৭ মিনিট আয়ু কেড়ে নেয়। দিনে ১০টা সিগারেট টানার অর্থ হল জীবন থেকে দৈনিক ৭৫ মিনিট সময় কমে যাওয়া
• ধূমপায়ীদের প্রতি দু’জনের এক জন তার নির্ধারিত আয়ুর প্রায় ১৪ বছর আগেই মারা যান
• হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল ধূমপান
• চোখের সমস্যা ও অকালে ছানি পড়া এবং রেটিনার অসুখের কারণ বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া
• যাঁরা দিনে ২০টি বা তারও বেশি সিগারেট টানেন, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি এক জন অধূমপায়ীর থেকে ৭০% বেশি
• সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায় থাকা রাসায়ানিক বাড়িয়ে দেয় পেরিফেরাল ভাস্ক্যুলার ডিজিজের আশঙ্কা। এই অসুখে পায়ের রক্তবাহী ধমনী সরু হয়ে গিয়ে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে হাঁটাচলা করলেই পায়ে ব্যথা হয়
তবে কোনও এক সময়ে ধূমপান করতেন মানেই যে এ সব অসুখের আশঙ্কা থাকছে, এমনও নয়। মনের জোর রেখে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হলে ধীরে ধীরে অনেকটাই কাটিয়ে ফেলা যাবে এর কুপ্রভাব। বড়জোর কয়েক বছর সময় লাগবে।