অভিনয় ও গানের সঙ্গে রাজনন্দিনী এবং পূরবের আত্মিক যোগ। দু’জনেই তরুণ প্রজন্মের শিল্পী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে বাংলা। কিন্তু উৎসবে মেতে ওঠার জন্য বাঙালি কবে আর কোনও কিছুর বাধা মেনেছে? সদ্য পেরিয়েছে পয়লা বৈশাখের উৎসব। এই উৎসবের আবহে ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রতি সোমবারের মতো এ দিনও ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জীবনের গূঢ় কোনও সমস্যার জট খুলতে নয়, বরং বৈশাখী আড্ডা দিতে। সব উৎসবের সূত্রই হল আড্ডা আর গল্পগুজব। তবে আড্ডা তো আর একা একা হয় না। সম্ভবও নয়। আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ উদ্যোগ বৈশাখী আড্ডায় অনুত্তমার সঙ্গী হয়েছেন অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল এবং শিল্পী পূরব শীল আচার্য।
রাজনন্দিনী ছোট থেকেই অভিনয়ের আবহে বড় হয়েছেন। পূরব সঙ্গীতের। অভিনয় ও গানের সঙ্গে রাজনন্দিনী এবং পূরবের আত্মিক যোগ। দু’জনেই তরুণ প্রজন্মের শিল্পী। বাংলা ছবি, বাংলা গান, বাংলা ভাষা তাঁদের বেড়ে ওঠায় কী রকম ভূমিকা পালন করেছে? আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানায় মোড়া এই নববর্ষের আড্ডায় অনুত্তমা প্রশ্ন রাখলেন দু’জন অতিথির কাছে। পূরব বলেন, ‘‘বাংলা গান কিংবা বাংলা ভাষা খুব স্বাভাবিক আমার বেড়ে ওঠার সঙ্গী হয়েছে। ছোট থেকেই বাড়িতে গুপী গাইন বাঘা বাইন চলছে। বহু বাংলা গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত তো রয়েছেই। আর বাড়ি ছাড়াও আমার স্কুলে বাংলা ভাষার চর্চা হত মারাত্মক রকম। ক্লাস শুরুর আগে আধ ঘণ্টা সবাই মিলে রবি ঠাকুরের গান গাইতাম। স্কুল এবং বাড়ি, দু’জায়গাতেই বাংলা সংস্কৃতি খুব স্বাভাবিক ভাবেই ছিল।’’ পূরবের কথা শুনতে শুনতে রাজনন্দিনীও স্মৃতির সরণি বেয়ে ছোটবেলায় পৌঁছলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ির পরিবেশটা একই রকম ছিল। মা তেল মালিশ করতে করতে আমার হাতে নাচের মুদ্রা ফুটিয়ে তুলতেন। দিদার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলায় বসে ‘ফুলে ফুলে’ গাইতাম। আমি ‘হেরিটেজ’-এ পড়তাম, স্কুলে বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে ততটাও চর্চা হত না। আমার বন্ধুবান্ধব ছিল অবাঙালি। ফলে কিছু বলতে হলে প্রথমে আমার মুখ থেকে ইংরেজি ভাষা বেরোত, তার পর হিন্দি, তার পরে গিয়ে বাংলা। এ জন্য বাবা-মায়ের কাছে কম বকা খাইনি।’’
পূরব এবং রাজনন্দিনী দু’জনের অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে আসছে, বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাড়ি এবং স্কুলের পরিবেশের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কোন পরিবেশে কতটা সময় ব্যয় হচ্ছে, সেটাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অনুত্তমা বলেন, ‘‘আসলে পরিবেশ ঠিক করে কতটা ভাষার সঙ্গে সংযুক্ত হব আর কতটা দূরে সরে যাব। সেটাও অনেক ভাবে নির্ণীত হয়। রাজনন্দিনীর ক্ষেত্রে বাড়ির পরিবেশে বাংলা ভাষার আদানপ্রদান চললেও, স্কুলে গিয়ে কিন্তু এই আবহটা একেবারে বদলে যেত। আবার পূরব বাড়ি এবং স্কুল— দু’ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার সান্নিধ্যে পেয়েছে। দু’জনের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে, নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যর প্রতি ভালবাসার শুরুটা আসলে বাড়ি এবং চেনা পরিবেশ থেকেই হয়।’’