মনোবিদ বললেন, ‘‘অযৌনতা কোনও অসুখ নয়, রোগ নয়, বিকার নয়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রেম কিন্তু তাঁরও আসে। সারা রাত ধরে চিঠি লেখা, সারা ক্ষণ ওর কথা ভাবা, হাতে হাত রেখে ঘোরাঘুরি— সবটাই আছে, তবে ওইটুকুই। সম্পর্ককে এর থেকে বেশি দূর আর যেতে ইচ্ছা করে না। একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে ভাল লাগলেও যৌনক্রিয়া ভাল লাগে না। যৌনতার প্রতি যেন বরাবরই এক ধরনের নিরাসক্তি। কেন এই নিরাসক্তি? তা হলে কি কোনও সমস্যা আছে? না কি এটাই তাঁর ব্যক্তিত্ব? এমন অনেকে আছেন, যাঁদের যৌনতার প্রতি কোনও আকর্ষণ নেই। কেমন তাঁদের যাপন? এ সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল, ‘অযৌনতা’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠানো যায়। বহু চিঠি এসে জমা হয় তাঁর কাছে। সময় সীমিত, তাই সেখান থেকেই বেছে নিতে হয় বেশ কিছু চিঠি। আকাশ লেখেন, ‘‘আমি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বতর্মানে তথাকথিত কোনও সম্পর্কে নেই। আমি কিন্তু উভকামী। কয়েক দিন ধরে দেখছি যাকেই মনে ধরছে, তাঁর প্রতি যৌন আসক্তি অনুভব করছি না। তবে পরবর্তীকালে যদি কারও সঙ্গে সম্পর্কে যাই, তখনও যদি এমনটা হয়? সম্পর্কে যৌনতা আসাটাই তো স্বাভাবিক! এটা কি তা হলে কোনও বিকার? আমার কি কোনও অসুখ হল?’’
অযৌনতা নিয়ে খোলামেলা চিঠি লিখেছেন অনেকেই। স্বাতীলেখা লেখেন, ‘‘আমার বিয়ে হয়েছিল, তখন আমার যৌনতা নিয়ে সেই অর্থে কোনও সমস্যা হয়নি। বিবাহবিচ্ছেদের পর আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। এখন যখন নতুন সম্পর্কে যাওয়ার কথা ভাবি, তখন বুঝতে পারি আমার যৌনতার প্রতি সে ভাবে আর কোনও আগ্রহ নেই। প্রেমের তো আরও অনেক দিক আছে, যৌনতা কি থাকতেই হবে? সম্পর্কে গেলে অন্য দিক থেকে প্রশ্ন আসছে, দিনে কত বার মিলন করতে পারবে? কত ক্ষণ যৌনসুখ দিতে পারবে? এই প্রশ্নগুলি শুনলে আমার যৌনতার প্রতি আকর্ষণ আরও কমে যাচ্ছে। তা হলে কি যৌনতাকে সে ভাবে না দেখলে আমাকে সারা জীবন একাই থেকে যেতে হবে? আমার সম্পর্কের চাহিদা কি অপূর্ণ থেকে যাবে?’’
এই সব প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিলেন অনুত্তমা। মনোবিদ বললেন, ‘‘অযৌনতা কোনও অসুখ নয়, রোগ নয়, বিকার নয়। অনেক দিন ধরে মনে করা হয় যৌনতা আসলে এক ধরনের পারফরম্যান্স যা আমাদের পেরে দেখাতে হবে। যৌনতা যেন এক ধরনের কাজ, না পারলেই জোটে ব্যর্থতার তকমা। একটা সময় অবধি মনে করা হত কারও এই রকম কোনও সমস্যা হলেই তাঁর কোনও রোগ আছে। তবে এখন যৌনতাকে মানুষের পরিচিতি হিসাবে, তাঁর অভিরুচি হিসাবে গ্রহণ করা হয়। যৌনতার চাহিদা, অভিব্যক্তি সব মানুষের এক হবে না। এমন অনেকেই আছেন যাঁদের যৌনতার ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তিয় সমস্যা হয়, তাঁদের মনে ইচ্ছা থাকে কিন্তু শরীর সেই ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে ওঠে। তবে অযৌনতার যাঁদের আছে, তাঁরা তা হলে বুঝবেন কী করে? ইচ্ছেটাই হল আসল কথা। আপনার যৌনতার প্রতি আগ্রহ না থাকতেই পারে, তা হলে সেটা হবে আপনার ইচ্ছা। এ ক্ষেত্রে আগে যৌনতা উপভোগ করতেন, এখন করেন না, এমন মানুষও কিন্তু আছেন। এক জনের যৌন অভিরুচি সব সময়ে একই থাকবে, এমনটা কিন্তু বলা যায় না। ধরা যাক, এখন যদি কেউ নিজেকে বিসমকামী ভাবেন, সে কোনও দিনও সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবেন না, এমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না। এমনটাও হওয়া কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়। যাঁরা যৌন আসক্তি বোধ করছেন না, তাঁদের বলব দয়া করে নিজেদের অপারক ভেবো না, নিজেকে অস্বাভাবিকতার লেন্সে ফেলো না। নিজের যৌন অভিরুচি নিয়ে কুণ্ঠিত বোধ করবেন না যেন! নিজেকে একঘরে করার কোনও কারণ নেই। কার জীবনে যৌনতার কতখানি প্রাধান্য থাকবে, সেটা তাঁর যাপন, তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তাঁর নিজের চাওয়া বা না-চাওয়ার উপর নির্ভরশীল, এতে লজ্জার কিছুই নেই।’’