জেনারেশন গ্যাপ সামলানোর উপায় বলে দিলেন অনুত্তমা। ছবি: সংগৃহীত।
‘লোকে কী বলবে’-র প্রতিটি পর্বে ইতিমধ্যেই অনেকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন। নিচ্ছেনও। এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে জীবনের এবং সমাজের এমন কিছু দিক উঠে এসেছে যেগুলি নিয়ে কথা বলা কঠিন। সেই সব ছুৎমার্গ, সামাজিক চাপ যেখানে অনেক লজ্জা, ভয় জুড়ে আছে সে সব বিষয় নিয়েই ‘লোকে কী বলবে’-র প্রতিটি পর্বে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি পর্বের আগে এমন অনেক প্রশ্ন এসেছে যার সঙ্গে শুধু সামাজিক সঙ্কট জুড়ে নেই, আরও অনেক ধরনের বিপন্নতাও থেকে যাচ্ছে। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব লাইভে এসে তেমনই কিছু সমস্যার কথা সরাসরি শুনলেন এবং সমাধান দিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্তমান প্রজন্মের হাতের মুঠোয় বিশ্ব। তাঁরা যেমন সপ্রতিভ, তেমনই বয়স অনুপাতে পরিণত। প্রযুক্তির ব্যবহারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের চেয়েও এগিয়ে। আর ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহারের হাত ধরেই সূক্ষ্ম ভাবে পাল্টে যাচ্ছে চারপাশের সমাজ ও সংস্কৃতি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের সমাজ সতত বহমান ও পরিবর্তনশীল। ফলে, একটি সময়ের পর সামাজিক চিন্তাধারা ও সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবেই। সেই পরিবর্তনের হাওয়ায় তৈরি হবে ‘জেনারেশন গ্যাপ’। সেই সমস্যার সূত্র ধরেই মনোবিদের কাছে এক জন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘জেনারেশন গ্যাপ’-এর সমস্যাটি কী ভাবে সামলাব? বয়স্কদের অভিজ্ঞতা যেমন মূল্যবান, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনটাও অনিবার্য। অনেক সময়েই আগের প্রজন্মের মানুষদের বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরাও ক্ষেত্র বিশেষে বর্তমান প্রজন্মের পরিবর্তনগুলি মেনে নিতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে দু’দিক তাল মিলিয়ে চলা কি আদৌ সম্ভব?
মনোবিদের উত্তর, ‘‘দু’টি দিক মানিয়ে চলা সহজ নয়। কারণ একসঙ্গে দু’টি বিষয়কেই তো সমপরিমাণ গুরুত্ব, সময় দেওয়া যায় না। কিন্তু আপনি যে প্রজন্মের মানুষ, আপনার যে নিজস্ব পথচলা রয়েছে, তাকে তো আপনাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। তা যদি দিতে গিয়ে আপনার মনে হয় আপনি সমপরিমাণ সময় ব্যয় করবেন, অন্যদের বোঝানোর ক্ষেত্রে, তা হলে কিন্তু মুশকিল। তবে মধ্যস্থতা করা সম্ভব কি না, সে দিকটা নিয়ে ভাবা জরুরি। আগের প্রজন্মের মানুষ আমাদের মানতে পারছেন না কারণ, তাঁদের কাছে নতুন প্রজন্ম একটা কঠিন পাঠ্যবইয়ের মতো। একেবারে দুরূহ। আমরা কখনও কখনও তাঁদের সঙ্গে সংলাপে আসতে চেষ্টা করতে পারি। বোঝাতে পারি, যে পরিবর্তনগুলি হয়েছে তাতে সমর্থন না থাকতে পারে, না-ই ভাল লাগতে পারে। কিন্তু এ প্রজন্মকে যেমন আগের প্রজন্মের অনেক কিছুর সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হয়, তেমনই আগের প্রজন্মের মানুষদেরও উচিত নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসা। কোনও সহবাস, কোনও সাহচর্য সারা ক্ষণ পরস্পরের ভাল লাগা নিয়ে হয় না। প্রজন্মগত যে পার্থক্য, সেখানে এক ধরনের চাপ থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তো এমন মতপার্থক্য আকছার হয়েই থাকে। তবে বেশি ভাবলে সমস্যা জাঁকিয়ে বসবে বেশি।’’