প্লাস্টিক ছাড়া আমরা জীবন ভাবতেই পারি না। ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া— সারা দিন আমরা নানারকম ভাবে প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসি। তার কোনওটা ভীষণ ভাবে ক্ষতিকারক, কোনওটা কম। কোনওটা আবার নিরাপদ। আপনার ব্যবহৃত প্লাস্টিকগুলো কোনটা কোন ক্যাটেগরিতে পড়ে জানেন?
প্রতিটা প্লাস্টিকের গায়েই একটি ত্রিভুজাকৃতি চিহ্ন থাকে। এটা আসলে রিসাইকেল অর্থাৎ পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ আপনি রোজ যে বোতলে জল খাচ্ছেন, যে প্লাস্টিকের মধ্যে তাজা সব্জি ভরে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিচ্ছেন বা আরও কোনও দৈনন্দিন কাজে লাগাচ্ছেন সেটা কতটা নিরাপদ বা আপনার জন্য আদৌ নিরাপদ কি না তা বোঝা যাবে এই প্রতীক থেকেই।
লক্ষ্য করে দেখবেন, প্রতিটা প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে ত্রিভুজাকৃতি এই রিসাইকেল বা পূনর্ব্যবহারযোগ্য প্রতীকের মধ্যে একটি নম্বর থাকে। ১ থেকে ৭ পর্যন্ত নম্বরের কোনও একটি এই প্রতীকের মধ্যে থাকে। আর প্রতিটা নম্বরই আলাদা অর্থ বহন করে। কোন নম্বর থাকলে কী হতে পারে তা দেখে নিন।
নম্বর ১: ত্রিভুজাকৃতি প্রতীকের মধ্যে যদি ১ লেখা থাকে, তার অর্থ সেটা পলিইথিলিন টেরেফটালেট দিয়ে তৈরি। সাধারণত জলের বোতল, বিভিন্ন কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল এই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয়। কোনও বোতলে ১ লেখা থাকলে তা নিরাপদ হিসেবেই গণ্য হয়। তবে তা একবারেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ এই বোতলে সুক্ষ ছিদ্র থাকে। ফলে খুব সহজেই ব্যাকটিরিয়া ঢুকে যেতে পারে।
নম্বর ২: যে সমস্ত প্লাস্টিকের বোতল অস্বচ্ছ পলিইথিলিন দিয়ে তৈরি, তাতে ২ নম্বর লেখা থাকে। ডিটারজেন্ট বোতল, দুধের বোতল লক্ষ্য করলে দেখবেন, তাতে ২ লেখা থাকে। এই নম্বরের অর্থ নিরাপদ। কারণ তাতে ব্যাকটিরিয়া তৈরি হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এটাও।
নম্বর ৩: তেলের বোতল, কলের পাইপের মতো প্লাস্টিকে ৩ নম্বর লেখা থাকে। এগুলো খুবই ক্ষতিকারক। লক্ষ্য রাখবেন, উনুনের পাশে যেন একেবারেই এই প্লাস্টিক না থাকে। বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মধ্যে ভুল করেও এই প্লাস্টিক ঢোকাবেন না। এটা আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য বিষ। এই উপাদান রক্তে মিশলে দেহে হরমোনের ভারসাম্য পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়।
নম্বর ৪: উপাদান লো ডেনসিটি পলিইথিলিন। সাধারণত এগুলো নিরাপদ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্যও। অর্থাৎ একবারের বেশি ব্যবহার করা যেতেই পারে।
নম্বর ৫: ওষুধের বোতল, কেচআপের বোতল বা সিরাপের বোতল যেগুলো পলিপ্রোপাইলিন দিয়ে তৈরি, তার গায়ে নম্বর ৫ লেখা থাকে। এগুলো সুরক্ষিত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
নম্বর ৬: পলিস্টাইরিন বা স্টাইরোফোম দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের দ্রব্যে নম্বর ৬ লেখা থাকে। এই বোতল থেকে ক্ষতিকারক স্টাইরিন নির্গত হয়। যা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই ৬ নম্বর লেখা প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহার বন্ধু করা উচিত।
নম্বর ৭: আইপড, কম্পিউটার, খাবারের কন্টেনার, বাচ্চাদের ফি়ডিং বোতল যে উপাদান দিয়ে তৈরি সেগুলো নম্বর ৭-এর ক্যাটেগরিতে পড়ে। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক বিসফেনল এ দিয়ে তৈরি। যা থেকে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চাদের ফিডিং বোতল কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া জরুরি তাতে কী নম্বর লেখা রয়েছে।
মনে রাখবেন ২, ৪ এবং ৫ নম্বর লেখা থাকলে সেগুলো তুলনামূলক নিরাপদ। নম্বর ১ লেখা বোতলও নিরাপদ হিসাবেই গণ্য হয়। ৬ এবং ৭ ভীষণ ভাবে ক্ষতিকর। তাই ৬ এবং ৭ লেখা নম্বরের বোতল অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
আরও একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, মাইক্রোওয়েভেবল প্লাস্টিক মানেই তা কিন্তু নিরাপদ নয়। এর অর্থ তা মাইক্রোওয়েভের তাপ সহ্য করতে সক্ষম। তা থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বেরিয়ে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতেই পারে।