শরীরে বাসা বাঁধা কোভিড-১৯ চিহ্নিত করতে এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্ব যে পদ্ধতি বা যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সাহায্য নিয়ে চলেছে তা হল আরটি-পিসিআর।
নাক থেকে কিংবা গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার পর সেই নমুনার আরটি-পিসিআর করা হয়। কিন্তু জানেন কি এই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা আসলে কী?
আরটি-পিসিআর হল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি পরীক্ষা। আরটি-র পুরো অর্থ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন এবং পিসিআর-এর পুরো অর্থ পলিমিরেজ চেন রিয়্যাকশন।
জীবকূলের শরীরে নানা জৈবিক কার্যকলাপ সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। জীবদেহের প্রতিটি কোষের মধ্যে থাকা ডিএনএ-তে প্রতি মুহূর্তে মূলত তিনটি প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
রেপ্লিকেশন (দ্বিতন্ত্রী ডিএনএ থেকে দ্বিতন্ত্রী ডিএনএ তৈরি হয়), ট্রান্সক্রিপশন (দ্বিতন্ত্রী ডিএনএ থেকে একতন্ত্রী আরএনএ তৈরি হয়) এবং ট্রান্সলেশন (একতন্ত্রী আরএনএ থেকে প্রোটিন তৈরি হয়।)
এই দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি যাকে বলা হচ্ছে ট্রান্সক্রিপশন সেটি যখন উল্টো হয়, অর্থাৎ যখন আরএনএ থেকে ডিএনএ তৈরি হয়, সেটিকে বলা হয় রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন।
আরটি-পিসিআর পদ্ধতির প্রথম ধাপই হল এই রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন। অর্থাৎ এই ধাপেও আরএনএ থেকে ডিএনএ তৈরি করা হয়।
আরটি-পিসিআর পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপে সম্পন্ন হয় পলিমিরেজ চেন রিয়্যাকশন। যেখানে প্রথম ধাপে উৎপন্ন ডিএনএ-র সংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেওয়া হয়।
কেন রিভার্স ট্রান্সক্রিপশনের প্রয়োজন হয়? কারণ কোভিড ১৯-এর দেহে জীনবস্তু হল আরএনএ। তাদের দেহে জীনবস্তু হিসাবে ডিএনএ থাকে না।
তাই নমুনার পলিমিরেজ চেন রিয়্যাকশন করে কোনও ব্যক্তির শরীরে কোভিড ১৯-এর উপস্থিতি জানতে চাইলে প্রথমে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াটি করা হয়।
যদি ওই ব্যক্তির শরীরে কোভিড ১৯-এর জীবাণু থাকে তা হলে তাঁর থেকে সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে ওই ভাইরাসের আরএনএ থাকবে। রিভার্স ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে সেই আরএনএ-কে প্রথমে ডিএনএ-তে রূপান্তরিত করা হয়।
এর পর আসে দ্বিতীয় ধাপ। ডিএনএ-র সংখ্যা বাড়ানোর ধাপ। এর জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্র রয়েছে। সেই যন্ত্রে উৎসেচকের সাহায্যে এই কাজ করা হয়।
কতটা পরিমাণ ডিএনএ তৈরি হলে ওই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ কি না জানা সম্ভব? এর জন্য গবেষকরা একটি মাপকাঠি স্থির করেছেন।
ওই মাপকাঠি হল ৩৫ সাইকেল। পলিমিরেজ চেন রিয়্যাকশনের ৩ সাইকেলের পরও যদি কোভিড ১৯-এর জীবাণু না মেলে তা হলে চিকিৎসকেরা ধরে নেন তিনি কোভিড নেগেটিভ।
আর যদি ৩৫ সাইকেলের মধ্যেই জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে তা হলে তিনি কোভিড পজিটিভ।
কতগুলো সাইকেলের পর বা কত দ্রুত ওই ব্যক্তির নমুনায় কোভিড ১৯ জীবাণু ধরা পড়ছে তার উপর নির্ভর করে ওই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাল লোড কতটা।