ব
াড়িতে খুদে সদস্য থাকলে, চকলেট সে বাড়ির নিত্য অতিথি হয়ে যায়। এমনি চকলেট বার তো থাকছেই, তা ছাড়া আইসক্রিম, বিস্কিট, কাপকেক, পেস্ট্রি, ডোনাটেও চকলেট... মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায় জিনিস বিকোতে চকলেটে ভরসা রাখছে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। বাড়িতে সন্তানকে খাবার খাওয়ানোর জন্য স্বাদ বাড়াতে অভিভাবকও অনেক সময়েই চকলেট বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন খাবারে। কিন্তু এই চকলেটই যে শিশুদের বন্ধুরূপী শত্রু হয়ে উঠছে ক্রমশ, সে দিকে কি খেয়াল থাকছে?
অতিরিক্ত চকলেট খাওয়ায় কী সমস্যা হতে পারে?
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘চকলেটের ক্যাফেইন কনটেন্টের জন্য তা উদ্দীপক ও উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। চকলেট জাতীয় সব খাবারেই চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। আইসক্রিম, চকলেট বার, কেক... যে সব খাবারে চকলেটের ব্যবহার, সেগুলি মূলত মিষ্টি হয়। ফলে এক দিকে দাঁত নষ্ট হওয়ার ভয়, আবার ওজন বাড়ার সমস্যাও রয়েছে।’’
শিশুরা অনেক সময়েই চকলেট খেয়ে মুখ ধোয় না। দাঁতে চকলেট আটকে ক্যাভিটি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজনও দেখা দিতে পারে। দাঁতের থেকে মাড়িরও ক্ষতি হয়। ফলে পরবর্তী কালে খুব কম বয়স থেকেই দাঁত ও মাড়ির সমস্যা লেগেই থাকে।
শিশুদের মধ্যে শারীরচর্চা বা দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলোর প্রবণতাও কমছে। তার উপরে রোজ চকলেট খেয়ে গেলে ওবেসিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত চকলেট খেলে এর ক্যাফেইন কনটেন্টের জন্য ঘুম না আসার সমস্যাও দেখা দিতে পারে ছোটদের মধ্যে।
রোজ চকলেট খাওয়া কি ভাল?
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিসের কথায়, ‘‘চকলেটে কোকো ও ক্যাফেইন দুই-ই থাকে। ফলে তা মুড ভাল রাখতে সহায়ক। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসও থাকে। কিন্তু চকলেট দিয়ে তৈরি খাবারে সুগার কনটেন্ট বেশি থাকায় তা রোজ খেলে ক্ষতিকর। তাই বাচ্চাদের ট্রিট হিসেবে চকলেট দিন। রোজকার ডায়েটের অংশ হিসেবে চকলেট রাখবেন না।’’
এ বিষয়ে সহমত পুষ্টিবিদ সুবর্ণাও। তাঁর কথায় ‘‘শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে চকলেট উপকারী। তাই চকলেট বন্ধ করবেন না, কিন্তু রোজ দেবেন না। অতিরিক্ত চকলেট খেলে এর ভাল গুণের চেয়ে খারাপ প্রভাবই বেশি পড়ে। অনেক শিশুই চকলেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। চকলেট ছাড়া কোনও খাবার খেতে চায় না। তাদের ক্ষেত্রে রোজ অল্প অল্প করে চকলেটের পরিমাণ কমাতে বলা হয়। যে রোজ দু’তিনটি করে চকলেট কিউব খায়, প্রথমে তার চকলেট কিউব একটা করে বন্ধ করতে হবে। তার পরে আর একটা... এ ভাবে ক্রমশ কমিয়ে এনে এক দিন চকলেট না দিয়ে দেখুন। আর চকলেট খেতে চাইলে ডার্ক চকলেট দিন। এতে সুগার কনটেন্ট কম থাকে।’’ ফলে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না, চকলেটের ভাল গুণটাও গ্রহণ করতে পারে শিশুরা। আবার ডার্ক চকলেটের তিতকুটে স্বাদের জন্য চকলেটের প্রতি আসক্তিও কমে সহজে।
কী করবেন?
প্রথম থেকেই বাচ্চাদের সব খাবারে চকলেট ফ্লেভার দেবেন না। অনেক শিশুই খেতে চায় না। ফলে অভিভাবকেরা খাবার মুখরোচক করতে হেলথ ড্রিঙ্ক, বেবি ফুডেও চকলেট ফ্লেভার বাছতে শুরু করেন। ফলে সে স্বাভাবিক বা নিউট্রাল ফ্লেভার খেতেই চায় না। পরে যখন মিষ্টি মিষ্টি চকলেট বার পায়, তখন তা খাওয়া অভ্যেসে পরিণত হয়ে যায়।
বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে অতিথি বা বন্ধুবান্ধব এলে তাঁদের চকলেট উপহার হিসেবে আনতে বারণ করুন। নিজেও কোনও বাচ্চার জন্য চকলেটের বদলে অন্য উপহার নিয়ে যেতে পারেন।
সন্তান চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে দাঁত ব্রাশ করে পরিষ্কার করে দিন। সন্তানকে মুখ হাঁ করতে বলে দেখে নিন, দাঁতে চকলেট আটকে আছে কি না।
বড়রাও চকলেট খাওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন। আর ডায়াবেটিক ও রেনাল রোগীদের চকলেট খাওয়ায় রাশ টানতে হবে।