সালোঁয় গেলে অক্সিজেন ফেশিয়ালের নাম শোনা যায়। এটি কি আপনিও করতে পারেন? ছবি: ইন্টারনেট।
সৌন্দর্যের জাদু লুকিয়ে ত্বকেই। নজরকাড়া রূপের জন্য কেউ ভরসা রাখেন ঘরোয়া টোটকায়। কেউ আবার নিয়ম করে ছোটেন সালোঁ থেকে স্পা-তে। রূপচর্চার প্রসঙ্গ উঠলেই অনিবার্য ভাবে এসে পড়ে ফেশিয়ালের কথাও। স্বল্প সময়ে মুখে লাবণ্য ফেরাতে এর বিকল্প হয় না। আবার ফেশিয়ালের গুণে সমাধান হয় ত্বকের হরেক সমস্যারও।
চাহিদার দিকে নজর রেখে চারকোল, ভিটামিন সি, গোল্ড, ডায়মন্ড, অ্যান্টি এজিং, হাইড্রা— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যনতুন ফেশিয়ালের সম্ভার আনছেন রূপচর্চা শিল্পীরা। সেই তালিকায় গত কয়েক বছরে চর্চিত নামটি হল অক্সিজেন ফেশিয়াল। শোনা যায়, আমেরিকান পপ তারকা ম্যাডোনা থেকে, মডেল-অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানও নাকি তারুণ্য ধরে রাখতে এই বিশেষ ধরনের ফেশিয়ালটি বেছে নিয়েছিলেন। আর এতেই এখন আকৃষ্ট বিভিন্ন বয়সিরা। সালোঁর পেশাদার কর্মীরাও ত্বকের ধরন, সমস্যা বুঝে অনেককে এই ধরনের ফেশিয়ালের পরামর্শ দিচ্ছেন।
কী এই অক্সিজেন ফেশিয়াল?
নামেই এর পরিচয়। শ্বাস নেওয়া থেকে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ— অক্সিজেন ছাড়া জীবন অচল। সেই অক্সিজেন মুখের কোষে কোষে পৌঁছে ত্বকের জৌলুস ফেরানোর প্রচেষ্টা হয় এই ফেশিয়ালে। সালোঁ থেকে স্পা— রূপচর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বেরা বলছেন, এতেই ফেরে মুখের জেল্লা। সমাধান হয় ত্বকের হরেক সমস্যার। কখনও বিশেষ কিট, কখনও আবার যন্ত্রের ব্যবহারে অক্সিজেন ফেশিয়াল করা হয়।
কী কী উপকার মেলে?
বলিরেখা দূর হয়। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। ত্বকের জন্য জরুরি কোলাজেন নামক প্রোটিন উৎপাদনেও সহায়ক অক্সিজেন ফেশিয়াল। যার দৌলতে ত্বকে থাকে তারুণ্যের ছোঁয়া।
শুধু এটুকুই নয়, এই ফেশিয়ালের বিশেষত্ব হল, শুষ্ক, তৈলাক্ত ত্বকের পাশাপাশি স্পর্শকাতর ত্বকেও করা চলে। দূষণের প্রভাব পড়ে চোখেমুখে। রোদের তাপে জৌলুস হারায় ত্বক, কারও মুখে কালচে ছোপ পড়ে। বলিরেখা দূর করা থেকে ত্বককে সুন্দর করে তুলতে এটি বেশ ফলপ্রসূ।
অক্সিজেন ফেশিয়াল ত্বককে আর্দ্রতা জোগায়, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। এই ধরনের ফেশিয়ালে অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং ত্বকের উপযোগী উপাদান ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে ত্বকের জৌলুস ফিরে আসে। অক্সিজেনের ব্যবহার, মাসাজের ফলে বলিরেখা কমে। ব্রণ সারাতেও এটি কার্যকর। সে কারণে পুরনো হলেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। বরং রয়ে গিয়েছে ‘ট্রেন্ডিং’।
কৌশলই বা কেমন?
সাধারণ ফেশিয়ালের থেকে অনেকটাই আলাদা অক্সিজেন ফেশিয়াল করার প্রক্রিয়া। এই ফেশিয়ালের মূল কথাই হল, কৌশলে মুখের ত্বকের কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। বিভিন্ন সালোঁ বা স্পা-এ অক্সিজেন ফেশিয়াল নানা ভাবে করা হয়। প্রথমে এক্সফোলিয়েশন। তার পর বিশেষ ধরনের স্প্রে করার যন্ত্রের সাহায্যে অতিরিক্ত ঘনত্বযুক্ত অক্সিজেন ত্বকে দেওয়া হয়। ব্যবহার করা হয় সিরাম, যা মুখে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিনের জোগান দেয়। কোথাও ত্বকের কোষে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য বিশেষ ধরনের কিট ব্যবহৃত হয়, কোথাও শুধু হাতের সাহায্যেই এই ফেশিয়াল হয়।
কৌশলে মুখের ত্বকের কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয় এই ফেশিয়ালে। ছবি: সংগৃহীত।
কেন এবং কখন করাবেন এই ফেশিয়াল?
১. ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়লে, বলিরেখা দেখা দিলে।
২. সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে ট্যান হলে বা কালচে ছোপ দেখা দিলে।
৩. দূষণের প্রভাবে ত্বক জৌলুস হারালে, ব্রণ, র্যাশের সমস্যা দেখা দিলে।
৪. স্পর্শকাতর ত্বকেও এই ধরনের ফেশিয়াল উপযোগী।
জনপ্রিয়তার কারণ কী?
অক্সিজেন ফেশিয়াল নতুন না হলেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার কারণ হল, যে কোনও ধরনের ত্বকে এটি উপযোগী। একটি ফেশিয়াল ত্বকের হরেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি ত্বকে সমস্যা না-ও থাকে, তা হলেও অক্সিজেন ফেশিয়াল ত্বককে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
কোথায় করা যায় অক্সিজেন ফেশিয়াল? খরচই বা কত?
গত কয়েক বছরে কলকাতার বিভিন্ন সালোঁতেও এই পরিষেবা চালু হয়েছে। যদিও এক একটি সালোঁ বা স্পা-এ এই ফেশিয়ালের নাম এক এক রকম। সালোঁভেদে এই ধরনের ফেশিয়ালের খরচ এবং পদ্ধতিও আলাদা। মোটামুটি ৩০০০ টাকা থেকে এটি শুরু হয়। কোথাও খরচ ৫০০০ টাকা, কোথাও তার চেয়েও বেশি। কোথাও এই ধরনের ফেশিয়াল করতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে, কোথাও দেড় ঘণ্টা। ত্বকের সমস্যা ও ধরন দেখে পেশাদারেরা পরামর্শ দেন, কত দিন অন্তর, ক’বার ফেশিয়াল করা জরুরি।
সকলের জন্যই কি নিরাপদ?
সব ধরনের ত্বকে অক্সিজেন ফেশিয়াল করা গেলেও, অতিরিক্ত স্পর্শকাতর ত্বকে উপাদান, পদ্ধতিতে বদল আনার দরকার হতে পারে। এই ধরনের ত্বকে ফেশিয়ালে র্যাশ বেরোতে পারে, অন্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সে কারণে ফেশিয়াল করানোর আগে পেশাদার কারও পরামর্শ নেওয়াই ভাল।