woman

St. Xavier’s University: গোটা বিষয়টা হাস্যকর! বললেন পোশাক-বিতর্কে চাকরি ছাড়তে ‘বাধ্য’ হওয়া সেই শিক্ষিকা

নিউ টাউনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি ছাড়তে ‘বাধ্য’ হওয়া শিক্ষিকা কী বলছেন এখন? কী ভাবছেন? জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ১৮:৪৮
Share:

শিক্ষিকার সঙ্গে ‘অন্যায়’ হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তিনি অবশ্য এখন শহর থেকে অনেক দূরে। অন্য রাজ্যে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

যে ভাবে তাঁকে চাকরি ছাড়তে ‘বাধ্য’ করা হয়েছিল, তা ‘হাস্যকর এবং অন্যায্য’। মনে করেন নিউ টাউনের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা। শনিবার এমনই তিনি বললেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। পাশাপাশিই জানালেন, যত দিন সম্ভব লড়াই চালিয়ে যাবেন।

Advertisement

ওই শিক্ষিকার বক্তব্য, ‘‘গোটা ঘটনাটা হাস্যকর। অন্যায্য তো বটেই। এখন এত জন আমার হয়ে প্রতিবাদ করছেন দেখে ভরসা পাচ্ছি। যত দিন সম্ভব লড়াই চালিয়ে যাব।’’ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বদ্ধপরিকর।

ওই শিক্ষিকার সঙ্গে ‘অন্যায়’ হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাই কলকাতার নানা প্রান্তে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। তিনি অবশ্য এখন শহর থেকে অনেক দূরে। অন্য রাজ্যে। তবে সেখানে বসে সব ‘খবর’ পাচ্ছেন। এত জন পাশে আছেন জেনেই ভাল লাগছে নিউ টাউনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি ছাড়তে ‘বাধ্য’ হওয়া শিক্ষিকার। শনিবার তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে তেমনই বললেন।

Advertisement

অভিযোগ, ইনস্টাগ্রামে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকার সাঁতারের পোশাক পরা ছবি ছিল। তা দেখতে পান এক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই ছবি ছেলে কেন দেখছে, তা নিয়ে আপত্তি তোলেন তার অভিভাবকেরা। শেষে ছাত্রের বাবার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন গোটা বিষয়টি।

শিক্ষিকার তরফে যে বয়ান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেটমাধ্যমে দেওয়া তাঁর ছবিগুলি ‘আপত্তিকর’ এবং ‘অনুপযুক্ত’ বলে মনে করেন। অভিযোগ, সেই ছবির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বদনাম’ হচ্ছে। সে কারণেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও ওই শিক্ষিকার অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেই অভিযোগ মানেননি। তাঁদের তরফের দাবি, ওই শিক্ষিকা নিজেই ইস্তফা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আবার শিক্ষিকার শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, যে ভাবে তাঁকে সাত জনের সঙ্গে একটি ঘরে বসিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাকে ‘হেনস্থা’ বলাই উচিত!

ওই ঘটনাবলি ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের। এত দিন পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তার পরেই নেটমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শুরু হয়েছে বিতণ্ডা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশও তাতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছেন।

যে শিক্ষিকাকে নিয়ে ডামাডোল, তিনি আপাতত উত্তর ভারতে নতুন একটি কাজ নিয়ে চলে গিয়েছেন। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতাই করছেন। সেখান থেকেই ‘হেনস্থা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। নতুন কাজের শহর থেকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপ কথোপকথনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন, পোশাক নয়, কাজ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েই বিচার করা দরকার তাঁর মতো যে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে।

ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘‘কোনও মহিলাকেই পোশাক দিয়ে বিচার করা যায় না। এত বছর ধরে নারী আন্দোলন চলছে। সাজপোশাক দিয়ে আমাদের বিচার করা যায় না। শিক্ষাই আমার পরিচয় হওয়ার কথা। আমরা এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের পথ দেখাব, শেখাব। যাতে তারা নিজেদের মতো ভাবতে শেখে। এটাই শিক্ষকদের কর্তব্য। এর বেশি নয়, কমও নয়।’’ তবে সে কাজ তিনি আপাতত কলকাতা শহরে বসে করবেন না। যেখানে গিয়েছেন, সেখানে ভালই আছেন। সে কথাও জানালেন ওই শিক্ষিকা।

কিন্তু কিছু প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তাঁর যেমন নিজস্ব মতামত আছে, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও মতামত থাকতে পারে। সে কথা কি তিনি অস্বীকার করবেন?

তেমন কোনও দাবি অবশ্য নেই অভিযোগকারিণীর। তিনি বিশ্বাস করেন, সকলেরই নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। তবে তা ব্যক্তিগত পরিসরে। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত মত আর আইনের মধ্যে ফারাক আছে বলেও মনে করেন। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই দেশের নাগরিক হিসাবে তাঁরও নিজের মতামত ও ভাবনা প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যত দিন এ দেশের নাগরিক থাকব, তত দিন সেই অধিকার আমার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবেন না।’’ নিজের মতো করে মতামত প্রকাশ, চলাফেরা এবং কাজ করার জন্য অধিকারের লড়াই তাই চালিয়েই যাবেন কলকাতার এই কন্যা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement