দেড় বছরের অসুস্থ ছেলেটাকে বাঁচানো যায়নি। স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে সংসার পাতলেন অন্য এক জনের সঙ্গে। নিজেকে সামলাতে না পেরে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বছর পঁচিশের গোবিন্দ রায়। কী ভাবে যেন প্রাণে বেঁচে গেলেন! তবে বাঁচানো যায়নি তাঁর একটা পা। হাঁটুর নীচ থেকে বাদ পড়ে। রেল হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসায় শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন বটে, কিন্তু মুছে গেল স্মৃতি। মানসিক ভারসাম্যহীন গোবিন্দ এর পর থেকে ট্রেনকেই বানিয়ে ফেলেন ঘরবাড়ি। এ ট্রেন-ও ট্রেন ঘুরতে ঘুরতে বছর দুয়েক পর এক দিন তিনি পৌঁছলেন প্রান্তিক স্টেশন লালগোলায়। বছরখানেকের মধ্যে এই লালগোলাই তাঁকে ফিরিয়ে আনে জীবনে। ক্রমে স্মৃতি ফেরত পাওয়া ওই যুবক এখন বীরভূমের সাঁইথিয়ায় নিজের গ্রামেই একটি মুদির দোকান চালান। নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার সবখানি কৃতিত্ব দেন ‘ঈশ্বরের দূত’কে।
মাইনুদ্দিন। আরবি শব্দ ‘মাইনুদ্দিন’-এর বাংলা অর্থ ‘ঈশ্বরের দূত’। আক্ষরিক অর্থেই গোবিন্দের মতো আরও অনেকের কাছে মাইনুদ্দিন শেখ ঈশ্বরের সাক্ষাৎ দূত। মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার প্রসাদপুরের মাইনুদ্দিনই জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন গোবিন্দকে। সাঁইথিয়ার গোবিন্দ একা নন, মহারাষ্ট্রের খাজ বিবি, উত্তরপ্রদেশের প্রভু যাদব, রাজস্থানের ভূপেন সিংহ, এ রাজ্যের তাজমিনা বিবি— গত ৪০ বছর ধরে এমন অসংখ্য মানুষকে জীবনে ফিরিয়েছেন মাইনুদ্দিন। শুধু জীবনে নয়, ঘরেও ফিরিয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া ওই সব মানুষকে। মাইনুদ্দিন আসলে ঘরের খেয়ে মনের ‘হুঁশ’ ফিরিয়ে বেড়ান। মনের ভারসাম্য ফিরিয়ে ঘরছাড়াকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আনন্দই তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এলাকার লোকজন তাই মাইনুদ্দিনকে ডাকেন ‘পাগলাদাদা’।
মনের ভারসাম্য ফিরিয়ে ঘরছাড়াকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আনন্দই মাইনুদ্দিনকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এলাকার লোকজন তাই তাঁকে ডাকে ‘পাগলাদাদা’। —নিজস্ব চিত্র।
নিজের গল্প বলতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তবুও কথায় কথায় মাইনুদ্দিন শোনালেন ১৯৭৯ সালের এক ঘটনার কথা। তিনি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। এক দিন বিকেলে লালগোলা বাসস্ট্যান্ডে দেখা হল সমবয়সি এক কিশোরের সঙ্গে। উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছে দেখে কিশোর মাইনুদ্দিন তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘‘কী হয়েছে তোমার?’’ জানা গেল, বাবা-মা বকেছেন, তাই রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রেনে চেপে পড়েছে। তার পর এসে পৌঁছে গিয়েছে লালগোলা। কিছুই চেনে না, জানে না। শুধু একটাই কথা তার, ‘‘বাড়ি ফিরব না।’’ অভিমানী সেই কিশোরকে সে দিন নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল মাইনুদ্দিন। ‘আব্বু’কে বুঝিয়ে মাসখানেক রেখেও দিয়েছিল নিজেদের সঙ্গে। তার পর কবীর কাজি নামের ওই কিশোরকে ট্রেনে তুলে দিয়েছিল। তত দিনে সেই কিশোরের মানভঞ্জন হয়েছে। মাইনুদ্দিনের কথায়, ‘‘৪৪ বছর আগের কথা। স্পষ্ট মনে আছে কবীরের মুখটা এখনও। বাড়ি যাওয়ার দিন ওর মুখের হাসিটা দেখতে পাই। ঘরে ফেরার আনন্দ যে কী, তা সে দিন প্রথম বুঝেছিলাম।’’ তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০ জনকে ঘরে ফিরিয়েছেন তিনি। বেশির ভাগকেই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পেয়েছিলেন মাইনুদ্দিন। তাদের মন ভাল করিয়ে, তার পর যাঁর যাঁর ঘরে ফিরিয়ে দিতে দিতে সেই কিশোর মাইনুদ্দিনের বয়স হয়ে গেল ৬২।
কাজ করার ধরনটা তাঁর বড় অদ্ভুত। লালগোলায় সারা দিনে শিয়ালদহ, কৃষ্ণনগর এবং রানাঘাট থেকে বেশ কয়েকটা ট্রেন এসে পৌঁছয়। যাত্রী নামিয়ে তারা ফের রওনা দেয় উল্টো গন্তব্যে অথবা কারশেডে। মাইনুদ্দিন অপেক্ষা করে থাকেন স্টেশনে। প্রতিটি ট্রেনের জন্য। স্টেশন ফাঁকা হয়ে গেলে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে দেখেন কোথাও কোনও ঠিকানাহীন মানুষ আছেন কি না! প্রান্তিক স্টেশন বলে ট্রেনে চেপে আসা ভবঘুরে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের অনেকেই লালগোলায় নামেন। মাইনুদ্দিনের অপেক্ষা তাঁদের জন্যই। এমন কেউ এলেই সেই ‘অতিথি’কে নিজের ‘জিম্মা’য় নিয়ে নেন তিনি। যাঁরা একটু বেশি অসুস্থ, তাঁদের ভর্তি করান কৃষ্ণপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অন্যদের ঠিকানা হয় তার ঠিক পাশের ‘নব আশ্রয়’। বছর আটেক আগে চার হাজার বর্গফুট আয়তনের এই আবাস তৈরি করেছেন ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন। রয়েছে ১৬টার মতো ঘর। সমস্তটাই ওই ভবঘুরে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য। মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। ট্রেন থেকে নামাদের পাশাপাশি, গোটা লালগোলা শহরের ভবঘুরেদের দু’বেলা অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থাও করেন মাইনুদ্দিন। চার সহযোগীকে নিয়ে শহর ও নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অভুক্ত ভবঘুরে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের খাওয়াদাওয়ার ‘দায়িত্ব’ যে তাঁরই।
বছর আটেক আগে ‘নব আশ্রয়’ নামে চার হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি আবাস তৈরি করেছেন মাইনুদ্দিন, সমস্তটাই ভবঘুরে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে মাইনুদ্দিন এই ‘দায়িত্ব’ পালন করে চলেছেন। এত বছরে যাঁদের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন, তাঁদের অনেকেই তাঁর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। যেমন সাঁইথিয়ার গোবিন্দ। বছর চারেক আগে এক রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন গোবিন্দ নেমেছিলেন লালগোলায়। একটা পা নেই। কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাবেন, কিছুই জানাতে পারেননি মাইনুদ্দিনকে। এমনকি, নিজের নামটুকুও নয়। পরিস্থিতি আঁচ করে মাইনুদ্দিন তাঁকে ওই রাতেই গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যান বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। সপ্তাহ দুয়েকের চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এর পর ওই যুবককে নিজের ডেরা ‘নব আশ্রয়’-এ নিয়ে আসেন। একটু একটু করে তাঁর স্মৃতি তখন ফিরছে। বছরখানেকের মধ্যেই ভিড় করে আসা স্মৃতি উজাড় করে দেন ওই যুবক। জানাতে শুরু করেন নাম, বাড়ি, কী হয়েছিল, কেন হারিয়ে যেতে চেয়েছিলেন জীবন থেকে— সমস্তটা। এর পরেই সাঁইথিয়ায় গোবিন্দের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মাইনুদ্দিন। গাড়ি করে পৌঁছেও দিয়ে আসেন বাড়িতে। স্বজনদের কাছে। সেই গোবিন্দ আজ বলছেন, ‘‘সবাই তো শুধু ছেড়ে গিয়েছে আমাকে। শুধু মাইনুদ্দিনভাই ছিল বলে জীবনে ফিরতে পেরেছি। মরণেও ভাইয়ের অবদান ভুলতে পারব না।’’
বিহারের বাসিন্দা সুবীর কুমার বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বছর ছয়েক আগের দুপুরে যখন মাইনুদ্দিন তাঁর কথা প্রথম জানতে পেরেছিলেন, তার আগের তিন দিন সুবীর লালগোলা স্টেশনের বাইরে পড়ে ছিলেন। মাইনুদ্দিন জানতে পারলেন, গত তিন দিন মুখে জলটুকু পর্যন্ত দেয়নি ওই তরুণ। কাছে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন তরুণটি। শুধু বলতে পেরেছিলেন, ‘‘আমার সব শেষ। সব খেয়ে নিল।’’ এর বেশি কিচ্ছুটি সে দিন বলতে পারেননি ওই তরুণ। পরে সুস্থ হওয়ার পর জানা যায়, দীর্ঘ ১০ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে সুবীরের প্রেমিকা অন্যত্র বিয়ে করেছিলেন। সুবীর সেই ধাক্কা সামলাতে পারেননি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তার পর এ ট্রেন, ও ট্রেন করতে করতে লালগোলা। মাইনুদ্দিনের হাতে পড়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফিরেও যান বিহারের বাড়িতে। এখনও যোগাযোগ আছে মাইনুদ্দিনের সঙ্গে।
শুধু মাথার উপরে ছাদ নয়, যাঁরা মনের আশ্রয় হারিয়ে ভবঘুরের মতো জীবন কাটান, তাঁদেরও একটা আশ্রয় পাইয়ে দেওয়ার অসম লড়াই লড়ে যাচ্ছেন মাইনুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র।
তবে মাইনুদ্দিনের ‘নব আশ্রয়’-এ সকলেই যে মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবঘুরে— এমনটা নয়। যেমন, বেলঘরিয়ার বিশ্বশ্রী সাউ। নিজের নাম ছাড়া কিছুই বলতে চাইতেন না। দীর্ঘ দিনের অযত্নে চুলে জট পড়ছে। বুক পর্যন্ত দাড়ি। শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় গভীর ক্ষত। ভবঘুরের মতোই আচরণ। কথাবার্তা। ‘নব আশ্রয়’-এ বসেই এক দিন আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। মাইনুদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে শোনালেন তাঁর কষ্টের কথা। জানালেন, স্ত্রী প্রয়াত। দুই ছেলের এক জন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, অন্য জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকত। এক দিন বাবাকে মারধর করে দুই ছেলে মিলে ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলেন, আর যেন বাড়ি না-ফেরেন! এর পর একরাশ যন্ত্রণা বুকে চেপে, ট্রেনে চড়ে অনির্দিষ্ট পথে বেরিয়ে পড়া। ট্রেনের শেষ স্টেশন লালগোলায় নেমে পড়া। ভবঘুরে সেজে থাকা। এবং শেষ পর্যন্ত মাইনুদ্দিনের আশ্রয়ে। বৃদ্ধ বিশ্বশ্রীকে বাড়ি ফেরানো আলাদা এক কাহিনি।
এ রকম ঘটনার পর ঘটনার সাক্ষী মাইনুদ্দিন। তবে কোনও কিছুই মনে রাখতে চান না তিনি। জীবনের চলার পথে অন্যের পাশে দাঁড়ানোকে কর্তব্য বলেই মনে করেন। তবে তাঁর কাজে লালগোলার মানুষ, পুলিশ-প্রশাসন সকলেই আপ্লুত। লালগোলা শহরের বাসিন্দা, লেখক নীহারুল ইসলামের কথায়, ‘‘শুধু লালগোলা নয়, আমাদের জেলার অন্যতম মানবিক মুখের নাম মাইনুদ্দিন শেখ। মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরেদের সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো ছাড়াও কলেজ-স্কুলে গাছ লাগানো, হাসপাতাল পরিষ্কার রাখার মতো কাজ স্বেচ্ছায় করে আসছেন তিনি দীর্ঘ দিন ধরে। এমন মানুষই তো সমাজ চায়। এরাই তো প্রকৃত সমাজসেবী।’’
লালগোলার বিডিও সুব্রত ঘোষের মতও তাই। তিনি বলেন, ‘‘মাইনুদ্দিন এক কথায় রত্ন! ভবঘুরে ও তাঁদের পরিবারের কাছে সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত! শুধু এ কাজই নয়, স্থানীয় হাসপাতালের উন্নয়ন থেকে শুরু করে একাধিক সামাজিক কাজে যুক্ত উনি। আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা।’’ লালগোলা থানার ওসি তরুণ সাহাও বলছেন, ‘‘স্মৃতি হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোর কাছ থেকে নাম-ঠিকানা জোগাড় করে তাদের বাড়িঘর ও পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমি এসে থেকে ওঁকে এই কাজটা নিরলস ভাবে করতে দেখছি।’’ স্থানীয় বিধায়ক মহম্মদ আলির কথায়, ‘‘মাইনুদ্দিন সমাজের অন্যতম সুনাগরিক। আমরা যতটুকু পারি সরকারি ভাবে ওঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। ওঁর কাজের কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’
স্ত্রী স্মৃতিকণা সরকার মাইনুদ্দিনের কাজের পাশে রয়েছেন বরাবর। কন্যা শ্রেয়া, পুত্র শীষ, জামাতা তৌফিক— সকলেই তাঁর দিকে হাতটা বাড়িয়ে রেখেছেন। পরিবার পাশে না-থাকলে বৃহত্তর পরিবার নিয়ে কাজ করতে পারবেন না স্বামী, এমনটাই মনে করেন স্মৃতিকণা। আর মাইনুদ্দিন নিজে কী বলছেন? এ সব কথাটথা শুনে মাথাটা নিচু করে শুধু বললেন, ‘‘মানুষ হিসেবে যেটুকু করা প্রয়োজন তার সামান্যই করতে পেরেছি। এ নিয়ে বেশি আলোচনা হোক, আমি চাই না। মানুষের পাশে থাকাই তো আমাদের কর্তব্য। এটাই স্বাভাবিক।’’
ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন কখনও তাঁর এই কাজে কারও আর্থিক সাহায্য নেননি। নিতে চানও না। তবে এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন অনেককে। যেমন স্থানীয় সাহিদুজ্জামান, হাসানুজ্জামান, মোহিত শেখ (জনি), মিজানুর খান, বরুণ ঘোষ, সুমন ঘোষ এবং আকাশ খান। এঁরাই এখন তাঁর বড় ভরসা। তবে মাইনুদ্দিন এখনও নিজের দুই হাতেই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখেন। তিনি মনে করেন, মানুষই তো হাত ধরবে বিপন্ন মানুষের। এটাই তো মানুষের স্বাভাবিক কাজ। ভালবাসার এই ‘স্বাভাবিক ইস্তাহারকে’ই তিনি হাত থেকে হাতে ছড়িয়ে দিতে চান।