যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেই উত্তরপ্রদেশে হোঁচট খেতে হয়েছে বিজেপিকে। সে জন্যই সাধারণ নির্বাচনে আশানুরূপ ফল হয়নি পদ্মশিবিরের। লোকসভা নির্বাচনের পরে আজ আয়োজিত উত্তরপ্রদেশ বিজেপির কার্যকরী কমিটি সভায় এই কথাগুলি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেছেন, ভোটের আগে যে বিরোধীরা কার্যত হেরে বসেছিল, ফল প্রকাশের পরে তারা ‘নেচে’ বেড়াচ্ছে। আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসনের আমলা মহলে বড়সড় রদবদল করেছেন যোগী। ১০ জন আইএএস অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন অযোধ্যার জেলাশাসকও। বিরোধীদের কটাক্ষ, ভোটে হারের দায় আমলাদের উপরে চাপাতে চাইছে বিজেপি।
২০১৪ সাল থেকে হিন্দি বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যে বিজেপি যে বিজয়রথ ছুটিয়ে ছিল, তা ধাক্কা খেয়েছে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে। ২০১৯ সালের জেতা ৬২টি আসন থেকে এ বার তাদের আসন সংখ্যা নেমে গিয়েছে ৩৩-এ। পক্ষান্তরে সমাজবাদী পার্টি ৩৭টি এবং কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে ৬টি আসন। উত্তরপ্রদেশে এই ধাক্কার জেরে নরেন্দ্র মোদীকে এ বার শরিক নির্ভর হয়ে ক্ষমতায় বসতে হয়েছে। গো বলয়ের প্রধান রাজ্যে এই ফলাফলের জন্য যোগী দায়ী করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকে। লখনউয়ে রামমনোহর লোহিয়া জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০১৪, ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২২-এ (লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন) রাজ্যে আমরা অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলাম। ২০১৪ সালের পরের নির্বাচনগুলিতে আমরা যত শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম, এ বারও তার কাছাকাছি আমরা পেয়েছি। কিন্তু কিছু ভোট অন্য দিকে চলে যাওয়া এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে আমাদের নির্বাচনী প্রত্যাশা বড় ধাক্কা খেয়েছে।’’
আজকের সভায় সাংসদ, বিধায়ক, রাজ্যের নেতারা এবং জেলা পরিষদের সভাপতি-সহ ৩ হাজার বিজেপি নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে যোগী বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের আগেই আমাদের বিরোধীরা হেরে গিয়েছিল। কিন্তু আজ তারা আমাদের চারদিকে নেচে বেড়াচ্ছে।’’ সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রচারের মোকাবিলা করতে দলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আত্মতুষ্টির কথা বললেও উত্তরপ্রদেশ বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দলের চোরাস্রোত এখনও অব্যাহত বলে সূত্রের খবর। এ বার লোকসভা নির্বাচনে অন্তত ৩৫ জন সাংসদকে বদলের প্রস্তাব নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দিয়েছিলেন যোগী। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে কর্ণপাত করেননি। তার নেতিবাচক প্রভাব ভোটে পড়ছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাঁদের মতে, আত্মবিশ্বাসের কথা বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পরোক্ষে খোঁচা দিয়েছেন যোগী।
উত্তরপ্রদেশে দলের হতাশাজনক ফলাফলের কারণ খুঁজতে একটি টাস্ক ফোর্স গড়েছিল বিজেপি। সেই কমিটি বলেছে, দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, জাতপাত এবং সরকারি আমলাদের অসহযোগিতা ভোটে প্রভাব ফেলেছে। তার জেরে প্রশাসনে রদবদল করে চলেছেন যোগী। এর আগে এক ডজন জেলাশাসককে বদল করা হয়েছিল। এ বার ১০ জন আমলাকে বদলি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত কাল মধ্যরাতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বদল করা হয়েছে অযোধ্যার জেলাশাসককে। সোনভদ্রের জেলাশাসক চন্দ্রবিজয় সিংহকে অযোধ্যার জেলাশাসক করা হয়েছে। তিনি আইএএস অফিসার নীতীশ কুমারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। অযোধ্যা ফৈজ়াবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ওই আসনে জয়ী হয়েছে সমাজবাদী পার্টি। যা বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে। অনেকেই মনে করেছেন, অযোধ্যার জেলাশাসক বদল অনিবার্যই ছিল। বিরোধীদের কটাক্ষ, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর সরকারের অপশাসনের কারণে অযোধ্যা-সহ উত্তরপ্রদেশে ডুবেছে বিজেপি। দায় চাপানো হচ্ছে আমলাদের উপরে। মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সভাপতি বদলের পরিবর্তে জেলাশাসক-আমলাদের বদলি করা হচ্ছে।