সপ্তম বিয়ের আগে ধৃত পুনম। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথমে বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করেন কয়েক জন। পাত্রী পছন্দ হলে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হত। কিন্তু বিয়ের এক-দু’দিনের মধ্যেই পালিয়ে যেতেন বধূ। সঙ্গে নিয়ে যেতেন স্বামীর টাকাপয়সা থেকে শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া অলঙ্কার। এই ভাবে ছয় স্বামীকে ঠকিয়েছিলেন যুবতী। সপ্তম বিয়ে করতে গিয়ে পড়লেন ধরা। বিয়ের আগেই টাকাপয়সা লুটের ছক করার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের বান্দা থেকে গ্রেফতার হলেন পাত্রী এবং ‘পাত্রীপক্ষ’। পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছেন মূল অভিযুক্ত এবং তাঁর দলের তিন সদস্য। এ যেন তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘ঠগিনী’ ছবির গল্প।
‘ঠগিনী’ ছবিতে নায়িকা একের পর এক বিয়ে করতেন। ফুলশয্যার রাতে স্বামীর সর্বস্ব লুট করে পালাতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন এক জন। উত্তরপ্রদেশে ধৃত পুনম এবং সঞ্জনা গুপ্তও একেবারে ওই ভাবে ছক কষে লোকজনকে ঠকাতেন। পুলিশ জানিয়েছে, পুনম নামে এক যুবতীর জন্য পাত্র খোঁজা হত। সঞ্জনা তাঁর মা সাজতেন। আর বিমলেশ বর্মা এবং ধর্মেন্দ্র প্রজাপতি নামে দুই যুবক পুনমের জন্য পাত্র খুঁজে আনতেন। তার পর বিয়ে হলেই স্বামীর টাকাকড়ি হাতিয়ে নিয়ে পালাতেন পুনম। সেগুলো দলের মধ্যে ভাগ হত। এই ভাবে ছয় যুবক এবং তাঁদের পরিবারকে প্রতারিত করেছেন তাঁরা। সপ্তম বার বিফল হয়েছে পুনমের ‘বিবাহ অভিযান’।
পুনমদের সপ্তম ‘টার্গেট’ ছিলেন বান্দার বাসিন্দা শঙ্কর উপাধ্যায়। ওই যুবক পুলিশের কাছে গিয়ে জানান, কিছু দিন ধরে তাঁর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করেছিল পরিবার। তখন বিমলেশ নামে যুবকটি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ‘ভাল পাত্রী’ হাতে আছে বলে পুনমের ছবি দেখান। পাত্রী পছন্দ হয় তাঁর। শনিবার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হবে বলে ঠিক হয়। কথামতো নির্ধারিত সময়ে আদালতে পৌঁছে যান তিনি।
যুবকের অভিযোগ, রেজিস্ট্রির আগে নানা কারণ দেখিয়ে বিমলেশ তাঁর কাছে লাখ দেড়েক টাকা চান। পাত্রী এবং পাত্রীপক্ষের ভাবগতিক দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। তিনি বিয়ে করতেই অস্বীকার করেন। তখন হম্বিতম্বি শুরু করেন ওই যুবক। তাঁকে হুমকি দেন যুবেকর সঙ্গীরা। খানিক ভেবে দেখার কথা বলে কোনও রকমে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার পরেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। তার পরেই ফাঁস হয় উত্তরপ্রদেশের ‘ঠগিনী’র কীর্তি। জানা যায়, বিবাহযোগ্য যুবকদের ‘টার্গেট’ করে ফাঁসাতেন পুনম। তাঁর দলের লোকজন প্রথমে পাত্রীর ছবি দেখাত পাত্রকে। পছন্দ হলে কথাবার্তা এগোত। তবে তাঁদের শর্তমাফিক বিয়ের আয়োজন হত ছোট করে। আমন্ত্রিতদের সংখ্যা কম করতে বলা হত পাত্রপাক্ষকে। এই ভাবে ছ’টি বিয়ে করেন পুনম এবং বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ির জিনিসপত্র চুরি করে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনেকে সামাজিক পরিচিতি এবং লোকলজ্জার ভয়ে আর থানাপুলিশ করেননি। তবে সপ্তম বার ব্যর্থ হয় ‘বিবাহ অভিযান’। বান্দার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিব রাজ বলেন, ‘‘আমরা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে গিয়ে দেখি, এক যুবতী এবং তাঁর দলবল বিয়ের নাম করে অনেককে ঠকিয়েছেন। আমরা মোট চার জনকে গ্রেফতার করেছি। ধৃতদের মধ্যে দু’জন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা। এঁরা টাকাপয়সা, গয়না চুরি করেন বলে অভিযোগ। ধৃতদের সম্পর্কে আরও খোঁজখবর করা হচ্ছে।’’