পাটিয়ালায় দিল্লি-শ্রী গঙ্গানগর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস আটকে প্রতিবাদ ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের সদস্যদের।ছবি পিটিআই
দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাবের মতো গুটিকয় রাজ্য ছাড়া সংযুক্ত কিসান মোর্চার ডাকা ভারত বন্ধের প্রভাব দেশের বাকি অংশে খুব একটা পড়েনি ঠিকই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি ভোটমুখী রাজ্যে তা অন্তত নির্বাচনের হাওয়া তুলে দিতে পেরেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের আশঙ্কা, সেই ক্ষোভকে ঐক্যবদ্ধ করে উত্তরপ্রদেশের ভোটে যোগী-সরকারের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্সে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনও ক্ষীণ। বরং এসপি, বিএসপি, কংগ্রেস, জাঠ সংগঠন সবাই আলাদা-আলাদা ভাবে বিজেপি-বিরোধিতা করায় কৃষকদরদি ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেষমেশ সত্যিই তা হলে, সে ক্ষেত্রে লাভ বিজেপিরই।
সোমবার সংযুক্ত কিসান মোর্চা দীর্ঘ বিবৃতিতে উত্তরপ্রদেশের চাষিদের দুর্দশার জন্য কেন্দ্রের পাশাপাশি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। কিসান আন্দোলনের উনুনে রাজনৈতিক রুটি সেঁকতে দেখা গিয়েছে এসপি, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির নেতাদের। কৃষক সংগঠনের নেতা রাকেশ টিকায়েত উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে ওই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে ক্রমশ নিজের এবং কৃষি-আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে চলেছেন বলে রাজনৈতিক সূত্রের দাবি। আজ তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতায় সারা দিন সক্রিয় থাকতেও দেখা গিয়েছে।
কৃষক আন্দোলন ঘিরে রাজনৈতিক সক্রিয়তা চোখে পড়েছে আর এক ভোটমুখী রাজ্য পঞ্জাবেও। রাহুল গাঁধী, নভজ্যোৎ সিংহ সিধু এবং পঞ্জাবের অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা বন্ধকে সমর্থন করেছেন। কেরলেও ইউডিএফ এবং এলডিএফ একে সমর্থন জানিয়েছে। মুম্বইয়ের রাস্তাতেও বন্ধ ‘সফল’ করতে কৃষক সংগঠনের সদস্য-সমর্থকদের পাশাপাশি একযোগে নেমেছেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা।
নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতায় বেঙ্গালুরুতে ভারত বন্ধ এক কন্নড় সংগঠনের। ছবি পিটিআই।
কিন্তু এত কিছুর পরেও ভোটে এর ফায়দা বিরোধী শিবির কতটা তুলতে পারবে, সেই সংশয় থাকছে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কৃষক আন্দোলন নিয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে ঠিকই। কিন্তু সেই ক্ষোভকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটবাক্সে টেনে আনার উদ্যোগ নেই। ফলে শেষমেশ সেই ‘বিরোধী ভোট’ ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
আজ উত্তরপ্রদেশে প্রধান দুই বিরোধী দল এসপি এবং বিএসপি কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে মোদীবিরোধী টুইট ও বিবৃতি দিয়েছে। সূত্রের খবর, দীর্ঘ গড়িমসি কাটিয়ে এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব নবরাত্রির পরে রাজ্য জুড়ে প্রচার শুরু করবেন। এ দিন ‘ভাজপা খতম’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাঁর টুইট, “সংযুক্ত কিসান মোর্চার ভারত বন্ধে এসপি-র পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। অন্নদাতাদের দাম্ভিক বিজেপি সরকার সম্মান করে না। ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার এরা খুইয়েছে।’’ কৃষক আন্দোলনের ফলে বিজেপির ভিতরে ভাঙন ধরার উপক্রম বলেও তাঁর দাবি।
অপর বিরোধী নেত্রী বিএসপি-র মায়াবতীকে গত দু’বছর মোদীবিরোধী স্বর তুলতে বিশেষ দেখাই যায়নি। কিন্তু ভোটের গন্ধে সম্প্রতি তিনিও নড়েচড়ে বসেছেন। কৃষক আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ ভারত বন্ধে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মায়াবতী বলেছেন, “ভোটের আগে আখ চাষের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্ত স্বার্থপরের মতো নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নেওয়া।”
উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা আজ লখনউয়ে গিয়েছেন। তাঁর টুইট, “খেত চাষিদের, মেহনত চাষিদের, ফসল চাষিদের। কিন্তু বিজেপি সরকার চায় তাদের কোটিপতি বন্ধুরা সব কব্জা করুক। সারা ভারত কৃষকদের সঙ্গে রয়েছে।” রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, “কৃষকদের অহিংস সত্যাগ্রহ আজও অটুট। কিন্তু শোষণকারী সরকারের তা পছন্দ নয়। এই কারণেই আজ ভারত বন্ধ।”
গতকালই উত্তরপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করেছে, আখের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২৫টাকা বাড়ানো হবে। প্রায় তিন বছর পরে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ভোটের আগে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের (আখ বলয়) মনজয়ের চেষ্টা বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলি। উত্তরপ্রদেশে রয়েছেন প্রায় ৪৫ লক্ষ আখচাষি। সেই হিসাবে, ভোটের আগে রাজ্যে প্রায় ২,৫০০-৩,০০০ কোটি টাকা ঢোকার কথা। কৃষক সংগঠনের বক্তব্য, গত তিন বছরের বকেয়া টাকাই আটকে রেখে দিয়েছে সরকার। এত দিন বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও সহায়ক মূ্ল্য বাড়ানো হয়নি। এখনও যা বেড়েছে, তা সামান্য। তবে রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ভোটের আগে আখচাষিদের কিছু টাকা পাইয়ে দিয়ে সামগ্রিক কৃষক আন্দোলনে চিড় ধরানোই সরকার পক্ষের লক্ষ্য।
সংযুক্ত কিসান মোর্চার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যোগী সরকার এখন সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে আসলে চাষিদের ঠকাচ্ছে এবং অপমান করছে। চাষিরা এই বৃদ্ধি মেনে নেবেন না এবং তাঁদের বকেয়ার জন্য লড়াই করবেন।”