প্রতীকী ছবি।
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন নিগ্রহের মামলায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের পরিচয় যাতে গোপন থাকে, তার জন্য বম্বে হাই কোর্ট একটি নির্দেশাবলি তথা গাইডলাইন্স প্রকাশ করেছে। অভিযোগের পর্ব থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়া, এমনকি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও স্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও পরিস্থিতিতেই অভিযুক্ত, অভিযোগকারী এবং সাক্ষীদের নামধাম, পরিচয়, ফোন নম্বর, ই-মেল আইডি, সাক্ষ্য ইত্যাদি প্রকাশ করা চলবে না। যদি কখনও তার প্রয়োজন পড়ে, তবে তার জন্য আদালতের পৃথক নির্দেশ গ্রহণ করতে হবে।
এই নির্দেশাবলি জারি করেছে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি গৌতম পটেলের বেঞ্চ। দেশে এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে এই প্রথম এমন কঠোর নীতি-নিয়ম বেঁধে দিল আদালত। এখন থেকে এই গাইডলাইন্সের কোনও নিয়ম ভাঙলে, তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে।
আদালত বলেছে, অনেক সময় দেখা যায়, যৌন নিগ্রহের মামলায় কোনও ভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির বা কোনও একটি পক্ষের পরিচয় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কিন্তু তাই বলে ওই তথ্য জনপরিসরে চলেই এসেছে— এই যুক্তি দেখিয়েও ২০১৩ সালের কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌননিগ্রহ রোধ (সংক্ষেপে পিওএসএইচ বা পশ) আইনে কোনও মামলার শুনানি বা রায়ের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না সংবাদমাধ্যম। সামাজিক মাধ্যমেও এ কাজ করা যাবে না।
পশ মামলার বিচার এ বার থেকে হবে পুরোপুরি বদ্ধ ঘরে (ইন-ক্যামেরা) বা বিচারক/বিচারপতির চেম্বারে। সেখানে থাকতে পারবেন শুধু অভিযুক্ত, অভিযোগকারী এবং দু’পক্ষের আইনজীবী। রায় লিপিবব্ধ করার মতো একান্ত জরুরি কাজে যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া, আদালতের সব কর্মীকে বিচারকক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। শুনানিতে এবং রায়দানেও কারও নাম নয়— ক-ব্যক্তি বনাম খ-ব্যক্তি এই ভাবে সংশ্লিষ্টদের কথা উল্লেখ করতে হবে। রায়দানও হবে বদ্ধ ঘরে। এমনকি রায়ের কপিও হাই কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা উচিত নয় বলে গাইডলাইন্সে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলায় ওকালতনামা দিয়েছেন, এমন আইনজীবীই শুধু এ বার থেকে মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র বা রায়ের কপি দেখতে বা পরীক্ষা করতে পারবেন।
পরিচয় প্রকাশ পেলে যৌন নিগ্রহের অভিযোগকারী তাঁর কর্মক্ষেত্রে ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবং এমন পরিস্থিতিতে পড়ার ভয়ে অনেকে অভিযোগ করতেই পিছপা হন। একই ভাবে, অভিযোগ প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত সকলেই নির্দোষ, এই যুক্তি চর্চায় ঠাঁই পায় না অনেক সময়েই। বরং সামাজিক ভাবে ও কর্মক্ষেত্রে বিপদে পড়তে হয় অভিযুক্তকেও। চলে উভয়েরই চরিত্রহনন। মনে করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি যাতে তৈরিই না হয় এবং কর্মস্থলে যৌন নিগ্রহ ঘটলে মহিলারা যাতে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন, তার ভিত তৈরি করে দিল বম্বে হাই কোর্টের এই কঠোর নির্দেশাবলি।
বিচারপতি পটেলের কথায়, “এত দিন এ বিষয়ে কোনও প্রতিষ্ঠিত গাইডলাইন ছিল না। তাই আগামী দিনে বিচার ও রায়দানের ক্ষেত্রে এমন প্রোটোকল স্থির করাটা ছিল ন্যূনতম প্রয়োজন।” তবে এ সংক্রান্ত খবর পরিবেশন করে মানুষকে সচেতন করার যে দায়িত্ব সংবাদমাধ্যম পালন করে, এই প্রোটোকল জারির পরে তাদেরও নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।