Histroy of DA

ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন, কর্মবিরতির ডাক, কিন্তু ভারতে এই মহার্ঘ ভাতা নীতি চালু হয়েছিল কেন?

সরকারি কর্মীরা জানেন কি ভারতে কী ভাবে চালু হয় এই নীতি! আজ যাঁরা ডিএ-র দাবিতে যুদ্ধে অবতীর্ণ, তাঁদের জানা দরকার এর নেপথ্যেও রয়েছে এক যুদ্ধের কাহিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ১০:৫৫
Share:

সাধারণত কেন্দ্রের শাসকদলের হাতে থাকা রাজ্য দিল্লিকেই অনুসরণ করে ডিএ বাড়ায়। ফাইল চিত্র।

ডিএ আমাদের অধিকার। এই মর্মে আন্দোলন তো আজকের নয়। আদালতে গিয়ে ‘অধিকার’-এ সিলমোহরও পেয়েছেন বাংলার সরকারি কর্মচারীরা। এখন নতুন দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ দিতে হবে। চাই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা। কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা জানেন কি ভারতে কী ভাবে চালু হয়েছিল এই নীতি!

Advertisement

আজ যাঁরা ডিএ-র দাবিতে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁদের জেনে রাখা দরকার এর নেপথ্যেও রয়েছে এক যুদ্ধের কাহিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার নীতি তৈরির পিছনে প্রধান এবং একমাত্র ভূমিকা পালন করে। পরে সেটাই হয়ে ওঠে বেতন কাঠামোর অঙ্গ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জিনিসপত্রের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে ওঠে। তখনই কর্মীদের অতিরিক্ত কিছু টাকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা শুরু হয়। যুদ্ধের বাজারে এক একটা শহরে জীবনযাপনের খরচ এক এক রকম হয়ে যায়। প্রথম মহার্ঘ ভাতা দেওয়া শুরু হয় মুম্বই (তৎকালীন বোম্বে)-তে। প্রথম দাবি তোলেন মুম্বই বস্ত্রশিল্পের কর্মীরা। সেই দাবি নিয়ে অনেক জলঘোলাও হয়। শেষে তৎকালীন বোম্বের শিল্প আদালতের নির্দেশে কর্মীদের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া চালু হয়। তার পরে এক দিন তা বেতনের আবশ্যিক অঙ্গ হয়ে ওঠে।

Advertisement

ওই একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই নিয়ম চালুর দাবি উঠতে শুরু করে। বছর দশেকের মধ্যে একই নীতিতে সর্বত্র ডিএ চালু হয়। নীতিটা ছিল, বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বেতনের সাযুজ্য রাখতে দেওয়া হবে এই ভাতা। এখন ভারতে যেটা দেওয়া হয় ‘কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ অনুযায়ী। তবে সব রাজ্যে সমান হারে ডিএ বাড়বে এমন কোনও নীতি নেই। কারণ, মুম্বইতে জীবনধারণের যে খরচ সেটা হয় তো উত্তর-পূর্বের কোনও শহরে নয়। আবার দিল্লির সঙ্গে কলকাতার জীবনধারণের খরচেও অনেক ফারাক। এই কারণেই এখনও পর্যন্ত যে নীতি মানা হয় তাতে মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির হার ঠিক করে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। সেটা করা হয়, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বাজারদরের উপরে ভিত্তি করে। যদিও রাজনীতির প্রবেশে ডিএ এখন অন্য মাপকাঠি হয়ে উঠেছে। সাধারণত দেখা যায় কেন্দ্রের শাসকদলের হাতে থাকা রাজ্য দিল্লিকেই অনুসরণ করে ডিএ বাড়ায়।

সময়ে সময়ে মহার্ঘ ভাতার নামও বদলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন শুরু হল তখন বলা হত ‘ডিয়ার ফুড অ্যালাউন্স’। এর পরে ‘ওল্ড টেক্সটাইল অ্যালাউন্স’ চালু হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৫৩ সালে আবার নিয়মে কিছু বদল এনে হয় ‘রিভাইজ়ড টেক্সটাইল অ্যালাউন্স’। স্বাধীন ভারতে প্রথম দিকে ডিএ বাড়ানো হত কর্মীদের দাবি বিবেচনা করে। পরে ‘কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ মেনে বছরে দু’বার ডিএ বৃদ্ধির রেওয়াজ তৈরি হয়।

কেন্দ্রীয় সরকার এখন যে ৩৮ শতাংশ ডিএ দেয় সেটার হিসাব শুরু হয় ২০১৬ সালে। নরেন্দ্র মোদী সরকার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় যে পরিমাণে ডিএ পাওয়া যেত সেটা মূল বেতনের (বেসিক) এর সঙ্গে মিশিয়ে শূন্য ডিএ দিয়ে শুরু হয় জানুয়ারির বেতন। জুলাইতে বাড়ে ২ শতাংশ। এর পরে প্রতি বছরের জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে ডিএ বাড়তে থাকে। তবে করোনাকালে ২০২০ সালের জানুয়ারি, জুলাই এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ডিএ বাড়েনি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের। এর পরে অবশ্য ২০২১ সালের জুলাইতে এক লাফে ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement