ঐতিহ্য ভেঙে রাজ্যসভার হাউস কমিটিতে নিয়োগের অভিযোগ ধনখড়ের বিরুদ্ধে। ফাইল চিত্র।
অতীতে বাংলার রাজ্যপাল পদে থাকাকালীন নিয়ম করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলতেন তিনি। এ বার তাঁর বিরুদ্ধেই বিধি ভেঙে নিজের দফতরের আধিকারিকদের বিভিন্ন মন্ত্রকের আটটি স্থায়ী কমিটি-সহ ২০টি সংসদীয় কমিটিতে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার অধ্যক্ষ জগদীপ ধনখড়কে নিশানা করেছে বিরোধীরা।
লোকসভা এবং রাজ্যসভার নিজস্ব হাউস কমিটি রয়েছে। রয়েছে যৌথ কমিটিও। ক্যান্টিনের খাবারে ভর্তুকির অঙ্ক থেকে অধিবেশন কক্ষের পর্দার রং পর্যন্ত অনেক বিষয়েই তারা আলোচনা করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও অধিকারী। প্রতিরক্ষা থেকে অর্থ মন্ত্রক পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের কাজের পর্যালোচনার জন্যও রয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
মূলত সাংসদদের নিয়ে গঠিত এই কমিটিগুলিতে সহায়তাকারী সদস্য হিসাবে রাখা হয় জুনিয়র অফিসারদের। কমিটির কার্যবিবরণী নথিভুক্ত করা এবং সমন্বয় রক্ষাই তাঁদের মূল দায়িত্ব। কমিটির আলোচ্য বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষাও তাঁদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সংসদের সচিবালয়ের মাধ্যমে তাঁরা নিযুক্ত হলেও লোকসভার স্পিকার এবং রাজ্যসভার অধ্যক্ষেরও এ ক্ষেত্রে ‘ভূমিকা’ থাকে।
সূত্রের খবর, ধনখড়ের দফতরের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি রাজেশ এন নায়েক, অখিল চৌধুরী, অভ্যুদয় সিংহ শেখাওয়াত, ডি দীনেশ, কৌস্তভ সুধাকর ভালেকর এবং ব্যক্তিগত সচিব সুজিত কুমার, অদিতি চৌধুরী এবং সহকারী ব্যক্তিগত সচিব পদে কর্মরত সঞ্জয় বর্মার নাম রয়েছে নয়া নিয়োগের তালিকায়।
বিরোধীদের অভিযোগ, নিজের দফতরের আধিকারিকদের বিভিন্ন মন্ত্রকের আটটি স্থায়ী কমিটি-সহ ২০টি সংসদীয় কমিটিতে নিয়োগ করার এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপালের আচরণ এ ক্ষেত্রে বেআইনি না হলেও সংসদীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, ‘‘বিষয়টি নজিরবিহীন। সংসদের রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের পরিপন্থী। রাজ্যসভা পরিচালনার নিয়মবিধিতে উপরাষ্ট্রপতি (তথা চেয়ারম্যান)-কে অনেক ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু এমন নিয়মবিধি নেই, যার ফলে তিনি অন্য একটি অফিসের (উপরাষ্ট্রপতি) কর্মীকে সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বসিয়ে দেবেন।”
সুখেন্দুর বক্তব্য, কমিটির সুপারিশ জমা না পড়া পর্যন্ত সদস্যেরা বাইরে মুখ খুলতে পারেন না। কিন্তু এই ভাবে বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ করা হলে কমিটির আলোচ্যের গোপনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়। যদিও অভিযোগ সম্পর্কে ধনখড়ের ব্যাখ্যা, ‘‘বহু কমিটির সদস্য এবং চেয়ারম্যানেরা বলেছেন, কমিটিগুলির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য কিছু করা দরকার। তাই মানবসম্পদ ব্যবহার করেছি। গবেষণামনস্ক, সুশিক্ষিত কয়েক জনকে কমিটিতে এনেছি, যাতে তাঁরা সদস্যদের সাহায্য করতে পারেন।’’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও শুক্রবার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন ধনখড়ের বিরুদ্ধে।