বরুণ গাঁধী। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের জমানায় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতাদের মধ্যে তাঁর উপরে প্রচারের আলো অনেক দিনই আর বিশেষ পড়ে না। ওই রাজ্যের পীলীভিতের সাংসদ হলেও লোকসভায় তেমন সক্রিয় দেখা যায় না তাঁকে। মাঝেমধ্যেই জল্পনা শোনা যায়, বিজেপি ছেড়ে নাকি কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন তিনি। এখনও কংগ্রেসে না গেলেও, নিজের দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় তিনি ক্ষুব্ধ বলেও গুঞ্জন। যিনি এই যাবতীয় জল্পনা আর গুঞ্জনের কেন্দ্রে, সেই বরুণ গাঁধী এ বার কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে চিঠি লিখলেন যোগী আদিত্যনাথকে।
সপ্তাহ খানেক আগেই বরুণ কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, চাষিদের যন্ত্রণা, তাঁদের অবস্থান বুঝতে হবে। মুজফ্ফরপুরে কিসান মহাপঞ্চায়েতের দিন প্রতিবাদী চাষিদের এই ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার পরে আজ, রবিবার আবার বরুণ যোগীকে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছেন, আখচাষিদের কথা ভেবে আখের দাম বাড়ানো হোক।
সম্প্রতি মোদী সরকার আখের সহায়কমূল্য বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রের ঘোষিত দামের থেকে উত্তরপ্রদেশে আখের দর এখনও বেশি। কিন্তু তিন বছর ধরে তা ৩১৫ টাকা প্রতি কুইন্টালেই আটকে রয়েছে। বরুণ দাবি তুলেছেন, আখের দাম বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হোক। মিটিয়ে দেওয়া হোক আখচাষিদের বকেয়াও। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের ‘রাজনৈতিক মহড়া’ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে এই চিঠিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা তিন পাতার এই চিঠি আজ বরুণ নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছেন। তার পরে বিজেপির অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, বরুণ কি এ ভাবে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন? না কি নিজের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করতেই কৃষকদের হয়ে মুখ খুলতে হচ্ছে তাঁকে? বিজেপি নেতৃত্ব বরুণের মাধ্যমে চাষিদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে চাইছেন কি না, সেই প্রশ্নও দানা বেঁধেছে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চাষিদের আন্দোলন এমনিতেই বিজেপির মাথাব্যথার কারণ। তার আগে যোগী জমানায় গোরক্ষক বাহিনীর বাড়বাড়ন্তে বেওয়ারিশ পশুর সমস্যাও চাষিদের ক্ষোভের কারণ। কারণ, কসাইখানায় বিক্রি করতে না পেরে চাষিরা গরু-বলদ খোলা ছেড়ে দেন। সেই সব বেওয়ারিশ পশু চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করে। বরুণ এ বিষয়েও যোগীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছেন, বেওয়ারিশ পশু নিয়ে চাষিরা বিরক্ত। সরকার এ নিয়ে ব্যবস্থা নিক। পিএম-কিসান প্রকল্পে প্রতি বছর চাষিদের ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করারও দাবি তুলেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে বরুণ আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থন জানানোয় আন্দোলনের অন্যতম নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেছিলেন, অনেকেই মতাদর্শগত ভাবে তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। অনেকে বিজেপির ‘বন্ধন’ থেকে মুক্তি চাইছেন। কিন্তু কেউ কেউ চক্রব্যূহে আটকে পড়ছেন। এ বার বরুণ এমন সময়ে যোগীকে চিঠি লিখেছেন, যখন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা উত্তরপ্রদেশে। লখনউয়ে দু’দিন বৈঠকের পরে তিনি রবিবার থেকে অমেঠি-রায়বরেলী সফর শুরু করেছেন। রাজনৈতিক ভাবে ভিন্ন মেরুতে হলেও, ভাই-বোনের সম্পর্কের সুবাদে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বরুণের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। প্রিয়ঙ্কার সফরের সময়ে বরুণের এই চিঠির মধ্যেও তাই কংগ্রেস, বিজেপি শিবিরের নেতারা আলাদা তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন।