নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ছবি পিটিআই।
কোভিড টিকাকরণের কাজে আরও গতি আনতে ভারতকে ১৮৫ কোটি টাকার অনুদান দেবে আমেরিকা। জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম সে দেশের বিদেশসচিব ভারতে এসেছেন। আজ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হয়েছে। পরে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএড)-এর প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, ব্লিঙ্কেন ভারতকে কোভিড টিকাকরণের সহায়তায় ১৮৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
আজকের বৈঠকে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে মোদীর কৌশলগত মৈত্রী, কোভিড-সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক নীতি এবং আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-ভারত-জাপান সমন্বিত কোয়াড মঞ্চ নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ্যে আসেনি।
বৈঠকের পরে মোদী টুইট করেন, ‘‘ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল লাগল। ভারত-আমেরিকা কৌশলগত মৈত্রী আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাইডেনের আগ্রহকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই মৈত্রী আমাদের অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকল্যাণকে গতি দেবে।’’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ব্লিঙ্কেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রত্যাশিত ভাবেই আফগানিস্তানের বিষয়টি সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে। ব্লিঙ্কেন স্পষ্ট করে বলেছেন, সামরিক পথে নয়, তালিবান এবং আফগান সরকারের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়েই আফগানিস্তানে সুস্থিতি ফেরা দরকার। তালিবানের হাতে গেলে আফগানিস্তান একঘরে হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, সেনা সরিয়ে নিলেও আমেরিকা আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে না। তাদের দূতাবাসও থাকছে।
জয়শঙ্কর এবং ডোভালের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের আজ আলোচনা হয়েছে কোভিড মোকাবিলা এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং কোয়াড নিয়েও। কোভিড মোকাবিলায় ভারতের সাহায্যের কথা স্মরণ করে ব্লিঙ্কেন বলেন, আমেরিকা প্রতিদান দিতে পেরে খুশি। বৈঠকের পরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথাও বলেন, আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পৃথিবীতে কম আছে। ভারত এবং আমেরিকার কর্মকাণ্ডই একুশ শতকে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে। দ্বিপাক্ষিক এই সম্পর্ককে তাই ‘পরের ধাপে’ উন্নীত করা প্রয়োজন।
তার আগে ব্লিঙ্কেন এ দিন দিল্লির হোটেলে নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও মিলিত হন। পেগাসাস বিতর্ক, স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর মতো ঘটনার আবহে এই আলাপচারিতায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের উপরে আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি জোর দেন। ‘মুক্ত চিন্তার নাগরিকরাই ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি’ বলে মনে করেন তিনি। স্বাধীনতা এবং সাম্য, গণতন্ত্রের এই দুই আদর্শকে জোরদার করার কাজ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভারত এবং আমেরিকা, দু’দেশকেই তার গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও মজবুত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ব্লিঙ্কেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে হতে হবে আরও উন্মুক্ত, আরও মিলনকামী, আরও সহনশীল এবং আরও সমতাভিত্তিক। সরকারে সমস্ত মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার এবং সেই সব স্বরের সম্মান থাকা দরকার, তা সে স্বর যারই হোক না কেন।’’
প্রসঙ্গত ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আজ দলাই লামার এক প্রতিনিধি নদুপ দোংচাং-ও দেখা করেছেন। ভারতে এসে এ ভাবে দলাইয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করার মধ্য দিয়ে চিনের প্রতি বার্তা রয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। চিন এটা ভাল চোখে না-ও দেখতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।