গণনার প্রবণতা অনুযায়ী, টানা দ্বিতীয় বার সরকার গড়ার লড়াইয়ে নেমে বিজেপি পাচ্ছে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট। যা ২০১৭-এর বিধানসভার চেয়েও প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। আবার ২০১৯ লোকসভার তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কম। এসপি পেতে চলেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। বিএসপি পাচ্ছে প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস থামছে ৩ শতাংশেরও কমে।
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি-র আসন কিছু কমল। এটুকুই যা সান্ত্বনা। বাকিটা হলুদবপু বুলডোজারের গেরুয়া হাওয়া! টানা দ্বিতীয় বার লখনউয়ের মুখ্যমন্ত্রী আবাসের বাসিন্দা থাকছেন যোগী আদিত্যনাথই।
বিরোধীদের দাবি ছিল, বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যে সমীকরণের কাঁধে ভর করে বিজেপি-র জয়জয়কার হয়েছিল, সেই ভাগাভাগির রাজনীতিতে লাগাম পরানো গিয়েছে। মূলত যে জাঠ-মুসলিম যুগলবন্দি চুরমার করে দিয়ে গেরুয়া ঢেউ তুলেছিল বিজেপি, কৃষক আন্দোলন তাতে প্রলেপ দেওয়াই শুধু নয়, নতুন করে মজবুত করেছে। বিরোধীদের আরও দাবি ছিল, রাজ্যে বেকারত্ব আর মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ফলায় বিদ্ধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী বিজেপি-র। পাশাপাশি, বৃদ্ধ গবাদি পশু থেকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের রমরমা, কত তিরেরই না নিশানা ছিল উত্তরপ্রদেশের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের সরকার। কিন্তু বৃহস্পতিবার গণনা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোঝা গেল, বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ এবং দাবিদাওয়ার গঙ্গাপ্রাপ্তি কার্যত সময়ের অপেক্ষা। জীবনের প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়ে বিপুল ব্যবধানে জয় তো আসছেই, সেই সঙ্গে যোগীই যে উত্তরপ্রদেশের জন্য ‘উপযোগী’— তা-ও কার্যত বুঝিয়ে দিল দেশের বৃহত্তম রাজ্যের আমজনতা।
অতএব, ‘বাবা’র বুলডোজারের ধাক্কায় উপুর্যপুরি দ্বিতীয় বার লখনউয়ের তখতের দখল নিশ্চিত বিজেপি-র।
ভোটগণনার প্রাথমিক প্রবণতা বলছে, উত্তরপ্রদেশের মহিলাদের ভোট ঢুকেছে বিজেপি-র খাতায়। যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে বিনাপয়সার খাদ্যশস্য বন্টন এবং আইনশৃঙ্খলার লক্ষণীয় উন্নতি। এই জোড়া নীতিতেই মহিলাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে বিজেপি-র। পাশাপাশি, হিজাব বিতর্কে উত্তরপ্রদেশের সরকারের ভূমিকাও মহিলা ভোট গেরুয়া শিবিরে টেনে এনেছে বলে দাবি ভোট বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের। তারই ফল এমন ঢালাও সমর্থন। উল্টো দিকে, নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ভোটদাতাদের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ অখিলেশ-সহ বাকি বিরোধীরা। যদিও সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতারা বলছেন, তাঁরা ভাল লড়াই দিয়েছেন।
তবে বিরোধীরা যে উত্তরপ্রদেশে একেবারে ধূলিসাৎ, তা নয়। বিরোধীদের একমাত্র সান্ত্বনা হল পাঁচ বছর আগের চেয়ে বিজেপি-র আসন সংখ্যা কমে যাওয়া। গত বিধানসভায় বিজেপি এবং তাদের জোটসঙ্গীরা মিলে পেয়েছিল ৩২৫টি আসন। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩১২টি আসন। যদিও এই ভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে সাতজন বিধায়ক এসপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে বিজেপি লড়াই শুরু করেছিল ৩০৫টি আসন নিয়ে। সেখানে এ বার হয়তো তারা থামবে তার থেকে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন কম নিয়ে।
প্রাথমিক প্রবণতা অনুযায়ী, বিজেপি উত্তরপ্রদেশে আড়াইশোর গণ্ডি অনায়াসে পেরোচ্ছে। অনেকের অনুমান, পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা হতে হতে সেটি ৩০০-র কাছাকাছিও পৌঁছতে পারে। অন্য দিকে, এসপি ২০১৭-এর তুলনায় ভাল ফল করলেও তারা বিজেপি-কে টক্কর দেওয়ার ধারেকাছে পৌঁছতে ব্যর্থ।
পাঁচ বছর আগের ভোটে ৭টি আসন পাওয়া কংগ্রেস প্রায় শূন্যের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। মেরেকেটে তারা ২টি আসন পেতে পারে। মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-ও দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ। টানা দ্বিতীয় বার সরকার গড়ার লড়াইয়ে নেমে বিজেপি পাচ্ছে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট। যা ২০১৭-এর বিধানসভা ভোটের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। আবার ২০১৯ লোকসভার তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কম। এসপি পেতে চলেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট। বিএসপি পাচ্ছে প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস নেমে যাচ্ছে ৩ শতাংশেরও নীচে। অর্থাৎ ভোটের ফলাফলে একটা জিনিস স্পষ্ট, বিজেপি বনাম এসপি-র দ্বিমুখী লড়াইয়ের উত্তরপ্রদেশে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রাসঙ্গিকতা এই বিধানসভা ভোটে কার্যত শূন্যে ঠেকেছে। সেই কারণেই এসপি ২০১৭ সালের তুলনায় ভাল ফল করেছে। কারণ, ভোট হয়েছে কার্যত আড়াআড়ি। ফলে বিজেপি-বিরোধী ভোটের বহুলাংশ গিয়ে পড়েছে অখিলেশের এসপি-র ঝুলিতে। বিরোধী ভোট কাটাকাটি হলে এসপি-র ভোটের পরিমাণ এবং আসনের পরিমাণ আরও কমতে পারত।
এই ভোটের ফলাফলে এটাও স্পষ্ট যে, আগামিদিনে উত্তরপ্রদেশে এসপি-ই বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে একেবারে সামনের সারিতে থাকবে। এই ভোটের ফলাফলে ভর করে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের রাস্তায় খানিকটা এগিয়ে গেল বিজেপি। এখন দেখার, আগামী লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনে গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করতে পারে কি না পদ্মশিবির।