Covid Vaccine

ভোপাল সয়ে কি টিকায় ‘গিনিপিগ’

সমাজকর্মী রচনা ঢীঙ্গরার দাবি, এই শহরে ১৯৮৪ সালের গ্যাস লিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির উপরে কোভ্যাক্সিন টিকা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভোপাল শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় দফা শেষের আগেই জরুরি প্রয়োগের ছাড়পত্র মিলে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে ভারতের নিজস্ব করোনা-টিকা কোভ্যাক্সিন। এ বার ভারত বায়োটেকের ওই টিকা পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়েও বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল ভোপালে। সমাজকর্মী রচনা ঢীঙ্গরার দাবি, এই শহরে ১৯৮৪ সালের গ্যাস লিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির উপরে কোভ্যাক্সিন টিকা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এবং সেটা করা হচ্ছে তাঁদের অনুমতি না-নিয়েই! টিকাকরণ যে হচ্ছে না, এটি যে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ— সে সব কিছুই জানানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিটি অভিযোগই খারিজ করেছেন।

Advertisement

গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এমনিতেই নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ধরনের পরীক্ষায় তাঁদের শামিল করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক দিকটির পাশাপাশি নীতিগত প্রশ্নও উঠেছে। রচনার অভিযোগ ভোপালের পিপলস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে সেখানে। ওই হাসপাতালের তরফেই ইউনিয়ন কার্বাইডের পুরনো কারখানার লাগোয়া শঙ্করনগর, গরিবনগর, জে পি নগরের মতো এলাকার বাসিন্দাদের পরীক্ষামূলক ভাবে কোভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি ও ভিডিয়ো-সহ একাধিক টুইট করেছেন রচনা। তিনি বলেছেন, ‘‘গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র মানুষগুলিকে ৭৫০ টাকা ধরিয়ে হাসপাতালে জড়ো করা হচ্ছে। তাঁদের বলা হচ্ছে, কোভিড আটকাতেই তাঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ সম্মতিপত্রের কপি দেওয়া হচ্ছে না। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীকে সব কিছু জানিয়ে তাঁর সম্মতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা নেওয়া হয়েছে টিকা দেওয়ার পরে— আগে নয়। (ছবিতে) প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় ডোজ় ৪ জানুয়ারি। সম্মতিপত্রে সই রয়েছে ৪ জানুয়ারির।’’ তাঁর টুইটার-ওয়ালে রয়েছে এক যুবকের সঙ্গে কথোপকথনও। ওই যুবক বলছেন, ‘‘টিকা দেওয়ার পরে বলা হয়েছিল, কোনও অসুবিধে হলে আমরাই চিকিৎসা করব। কিন্তু আমাদেরই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে। অনেকেরই বমি বা ব্যথা হয়েছে।’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই যুবকেরই একটি ভিডিয়ো নিজেদের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন পিপলস ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। সেখানে হাসপাতালের সোফায় বসে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, প্রথমে হাসপাতাল থেকে ওষুধ না-পেলেও পরে তিনি তা পেয়েছেন এবং পরিষেবায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। হাসপাতালের বক্তব্য, ‘‘এতেই বোঝা যাচ্ছে, রচনা ঢীঙ্গরার ভিডিয়োটি জাল।’’ বস্তুত, হাসপাতালের তরফেও পরপর টুইটে রচনার অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘মাত্র তিন-চারটি এলাকা থেকে নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছে। গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগস্ত কাউকেই আমরা নিয়ে আসিনি। ভারত সরকারের নির্দেশিকা মেনেই স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছে। এঁরা সবাই কোভিড নেগেটিভ। সরকারি প্রোটোকল অনুযায়ী দৈনিক ভাতা হিসেবে ৭৫০ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।’’ হাসপাতালের বক্তব্য, অতিমারির সময়ে এমন ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ তোলাটা স্তম্ভিত করার মতো।

Advertisement

এই যুক্তিতে অবশ্য বিতর্ক পুরোপুরি মিটছে না। কারণ, ইউনিয়ন কার্বাইড-লাগোয়া পাড়াগুলির অনেক বাসিন্দাই টিভি চ্যানেলের সামনে বলেছেন, টিকার পরীক্ষা চালানো, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া— এ সবের কথা কিছুই বলা হয়নি তাঁদের। শুধু বলা হয়েছিল, কোনও অসুবিধে হলে ফোন করতে। এমনকি সম্মতিপত্রে সই করিয়ে তার রসিদও দেওয়া হয়নি। একটি বুকলেট দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অনেকেই তো নিরক্ষর! টুইটারে আইনজীবী তথা সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ লেখেন, ‘‘দেখুন কী ভাবে কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষায় গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের। মহড়ার ঝুঁকির কথা না-জানিয়েই ৭৫০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই টিকায় সরকার ছাড় দিয়েছে এবং সেটি ২০০ শতাংশ নিরাপদ বলে গলা ফাটাচ্ছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement