শুভেন্দু অধিকারীর টুইট দেশের বিদেশনীতির পরিপন্থী, দাবি ডেরেক ও’ব্রায়েনের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের ‘কাল্পনিক’ কথোপকথন নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তা নিয়ে এ বার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকে নালিশ জানাল তৃণমূল। রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি লিখে শুভেন্দুকে ‘সেন্সর’ করার দাবি জানিয়েছেন।
স্পেন যাওয়ার পথে গত বুধবার দুবাই বিমানবন্দরের লাউঞ্জে মমতার সঙ্গে হঠাৎই দেখা হয়ে গিয়েছিল বিক্রমসিঙ্ঘের। পরস্পরের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ও করেন তাঁরা। চলতি বছরের নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বিক্রমসিঙ্ঘকে আমন্ত্রণ জানান মমতা। পড়শি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সেই সময়। সেই সঙ্গে বিক্রমসিঙ্ঘ মমতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি কি বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন?’’ জবাবে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওহ্ মাই গড!’’
শুভেন্দু ওই কথোপকথনকেই কিছুটা অন্য ভাবে লিখেছেন এক্স হ্যান্ডলে। চিত্রনাট্যের মতো করে শুভেন্দু লিখেছিলেন, মমতার উদ্দেশে বিক্রমসিঙ্ঘে বলেছেন, ‘‘আপনি কি আপনার রাজ্যকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন? যে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা!’’ পাল্টা মমতার ভাষ্যে বিরোধী দলনেতা লেখেন, ‘‘আপনি যদি দিক্নির্দেশ করেন তা হলে আমি বাজার থেকে আরও টাকা ধার নিতে পারি। আমি আপনাকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’’
তৃণমূলের বক্তব্য, শুভেন্দুর এই ‘বিকৃত বক্তব্য’ আসলে ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আঘাত করেছে। পড়শি দেশের সঙ্গে ভারতের ৭৫ বছরের সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রীকে এ-ও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিল সম্প্রদায়ের সঙ্গে ২০০ বছরের সম্পর্ক রয়েছে। ডেরেকের অভিযোগ, শুভেন্দুর এই বক্তব্য আসলে বাংলার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক সুসম্পর্ককে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। পাশাপাশিই, বিদেশমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তৃণমূল লিখেছে, যে ভাবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছেন শুভেন্দু, তা-ও দেশের বিদেশ নীতির পরিপন্থী। ডেরেকের স্পষ্ট অভিযোগ, বিধায়ক পদের অপব্যবহার করছেন শুভেন্দু।
ডেরেক এ-ও লিখেছেন, ঘরোয়া রাজনীতির বিরোধকে কখনওই বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া যায় না। শুভেন্দু সেটাই করেছেন। যা নিন্দনীয়। বিদেশ মন্ত্রকও যাতে নিন্দা জানায়, সেই দাবিও জানিয়েছে তৃণমূল। বাংলার শাসকদল এ-ও বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে যদি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা হলে তো তা ভারতেই আসছে। শুভেন্দু যা করেছেন তা আসলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নষ্ট করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। এমনটাই দাবি তৃণমূলের। তৃণমূলের এই চিঠি নিয়ে শুভেন্দু যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।