‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস’-এর পাণ্ডুলিপিটি আজও বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। —ফাইল ছবি।
স্বাধীনতার পর ঐতিহাসিক প্রতুল গুপ্তের তত্ত্বাবধানে রচিত ‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস’ বই আকারে প্রকাশিত হোক। বছর পাঁচেক আগে এই আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। নেতাজি অনুরাগী হিসাবে পরিচিত সুখেন্দুশেখরের ওই জনস্বার্থ মামলার শুনানি হল সোমবার।
১৯৪৮-৪৯ সালে প্রতুল গুপ্তের তত্ত্বাবধানে ‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস’ রচনা করে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের ইতিহাস বিভাগ। যদিও সেই পাণ্ডুলিপিটি আজও বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। এ নিয়ে নানা সময়ে মামলা-মোকদ্দমা করা হলেও বিষয়টি বিশ বাঁও জলেই রয়ে গিয়েছে।
২০০৮ সালে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি দাবি করেন নেতাজি গবেষক চন্দ্রচূড় ঘোষ। কিন্তু তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার তা দিতে অস্বীকার করে বলে দাবি। এর পর ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিন মাসের মধ্যে বই হিসাবে প্রকাশ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন তৎকালীন তথ্য কমিশনার। তবে ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। তবে তথ্য কমিশনারের নির্দেশই বহাল রাখে হাই কোর্টও। তা নিয়ে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে। ২০১২ সালের ২৯ মে সেই মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করা হলেও আজও তার নিষ্পত্তি হয়নি।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস সংক্রান্ত বইটি প্রকাশ করলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে কি না, সে সম্পর্কে বিদেশ মন্ত্রকের মতামত জানতে চেয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। বইটি ছাপলে তেমন কোনও আশঙ্কা নেই জানিয়ে দেয় বিদেশ মন্ত্রক। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে উল্লেখ করা হয়, “ওই পাণ্ডুলিপির ১৮৬ থেকে ১৯১ নম্বর পাতায় যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি নেতাজি। বরং জীবিত অবস্থায় অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন, এমন ধারণাকেই জোরলো করবে। সুতরাং বিষয়টির সর্বোচ্চ স্তরে মূল্যায়ন করা বা়ঞ্ছনীয়।” এর বেশ কয়েক বছর বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে হইচই হয়নি।
২০১৮ সালে বই প্রকাশের আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের জনস্বার্থ মামলা রুজু করেন সুখেন্দুশেখর। হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির এজলাসে ওই মামলার শুনানিও হয়েছিল। তবে তিনি বদলি হওয়ার পর ওই মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে সোমবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়।
সুখেন্দুশেখরের তরফে আদালতে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী। বইটি প্রকাশের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম উদাসীনতা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি, অবিলম্বে বইটি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশের আবেদন জানান। যদিও আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলির পাল্টা দাবি, বই প্রকাশে প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রকের আপত্তি নেই। বিষয়টি এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে বিবেচনাধীন।
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ১০ অগস্ট।