প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণে শোকবার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধীদের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনমোহনের মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী থেকেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুসংবাদে স্তম্ভিত মমতা। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেছেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আকস্মিক প্রয়াণে আমি ভীষণ স্তম্ভিত এবং শোকস্তব্ধ।” প্রয়াত অর্থনীতিক তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে কাছে থেকে দেখা এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শোকসন্তপ্ত গান্ধী পরিবারও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, সে কথা তুলে ধরেছেন রাহুলেরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা লিখেছেন, “মনমোহন সিংহের পাণ্ডিত্য এবং তাঁর প্রজ্ঞা প্রশ্নাতীত। তাঁর হাত ধরে দেশে যে আর্থিক সংস্কারের পথ চলা শুরু হয়েছিল, তার ব্যাপকতা সর্বজন স্বীকৃত।” মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁর স্নেহধন্য ছিলেন, সে কথাও সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন মমতা। মনমোহনের মন্ত্রিসভায় একদা মন্ত্রী থাকা মমতা লিখেছেন, তিনি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের পরশের অভাব বোধ করবেন। এই শোকের মুহূর্তে মনমোহনের পরিবার, বন্ধু এবং অনুগামীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ইউপিএ-১ এবং ইউপিএ-২ জমানায় আন্তর্জাতিক মহলে দেশের মুখ ছিলেন তিনিই। ইউপিএ-২ সরকারের আমলে মনমোহনের মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন মমতা।
প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স
রাহুল গান্ধী লিখেছেন, “মনমোহন সিংহ সততার সঙ্গে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নম্রতা এবং অর্থনীতির গভীর উপলব্ধি দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে।” প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। রাহুল লিখেছেন, তিনি এক জন পরামর্শদাতা এবং এক জন পথপ্রদর্শককে হারালেন। শোকপ্রকাশ করেছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রথম বার পা রাখা প্রিয়ঙ্কা লিখেছেন, “রাজনীতিতে মনমোহন সিংহের মতো সম্মান খুব কম মানুষই পেয়েছেন। তাঁর সততা সব সময় আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। বার বার বিরোধীদের অনুচিত এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ সত্ত্বেও দেশসেবার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল ছিলেন মনমোহন। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন এক জন সত্যিকারের সাম্যবাদী, জ্ঞানী, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন এবং সাহসী মানুষ। রাজনীতির রুক্ষ ময়দানে ভদ্রতায় তিনি ছিলেন অনন্য।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণে শোকার্ত রাহুল গান্ধী। ছবি: এক্স।
শোকবার্তা প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর। ছবি: এক্স।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারত এক জন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশনায়ককে হারাল। মনমোহন সিংহের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার মেয়াদকেও অতিক্রম করে গিয়েছে। তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারের এক জন স্থপতি, যিনি আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়েছেন। শান্ত অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্ব আসলে একটি দৃষ্টিভঙ্গি, আয়তন দিয়ে তার বিচার করা যায় না।”
শোকপ্রকাশ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স।
২০১৪ সালে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সরিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মোদী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যেরাও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লিখেছেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মৃত্যুসংবাদ অত্যন্ত দুঃখজনক। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থেকে দেশের অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ওঁর পরিবার এবং সমর্থকদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকবার্তা অমিত শাহের। ছবি: এক্স।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, মনমোহন সিংহ সেই গুটি কয়েক রাজনীতিকদের মধ্যে একজন যিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং প্রশাসনে সমান স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বিরাজ করেছেন। ভারতের অর্থনীতির সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। তাঁর প্রয়াণ দেশের একটি বড় ক্ষতি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও শোকপ্রকাশ করেছেন।
আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ অন্য নেতারাও শোকপ্রকাশ করেছেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকবার্তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। ছবি: এক্স।