অনেক দিন পরে মুখোমুখি মমতা, শুভেন্দু। — ফাইল ছবি।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অশোক লাহিড়ি, অগ্নিমিত্রা পাল এবং মনোজ টিগ্গা। এই প্রথম বিধানসভায় মমতার ঘরে গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। পরে বিধানসভায় নিজের বক্তব্যে শুভেন্দুকে ভাই বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। খুব অল্প সময়ের সাক্ষাৎ। কিন্তু তা আসলে চমক রাজ্য রাজনীতিতে। ইদানীংকালে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার যে সম্পর্ক তাতে উল্লেখযোগ্য হয়ে রইল শুক্রবার দুপুরের বিধানসভার ঘটনা।
নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের শপথগ্রহণ ঘিরে নতুন করে সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। শুভেন্দু শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে দায় ঠেলেন মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। তার ঠিক দু’দিন পর বিধানসভায় দু’জনের সাক্ষাৎ। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। মিনিট চারেক শুভেন্দু ছিলেন মমতার ঘরে। পরে মমতা বলেন, ‘‘শুভেন্দুকে চা খেতে ডেকেছিলাম।’’ আর শুভেন্দু বলেন, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রে সৌজন্য থাকবে। তাই সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েছিলাম। তবে কী আলোচনা হয়েছে বলব না। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা উচিত নয়।’’ শুভেন্দু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সকলকে চা খেতে বলেছিলেন। কিন্তু বিধানসভায় অধিবেশন চলায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদেরও ব্যস্ততার কারণে চা খাওয়া হয়নি।
শুক্রবার সকালে সংবিধান দিবস নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন শুভেন্দু। সেখানে শুভেন্দু শাসক দলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘অব দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি।’’ শুভেন্দুর এই বক্তব্যের জবাবও দিয়েছেন মমতা। তবে সেটা পরে। তার আগে শুভেন্দুকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মু্খ্যমন্ত্রী। দেখা করতে যান বিরোধী দলনেতাও। সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বিধানসভায় মমতার বক্তব্যেও চমক। অধিবেশনে মমতা শুভেন্দুকে ‘ভাই’ বলে উল্লেখ করেন।
মমতা বলেন, ‘‘ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম যাঁকে, সে বলল গণতন্ত্র নিয়ে।’’ শুভেন্দুর বাবা, তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর কথাও শুক্রবার বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘দল গঠনের সময় আপনি ছিলেন না। শিশির দা আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমি তাকে সন্মান করি।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূল গঠনের সময় অধিকারী পরিবারের কেউই তৃণমূলে যোগ দেননি। পরে আসেন তাঁরা। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় কাঁথিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়াইও করেছিলেন শিশির।
শুভেন্দুর গণতন্ত্র নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষের পাল্টা দিয়ে মমতা কেন্দ্রীয় সংস্থার দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘অব দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি, ফর দ্য এজেন্সি।’’ সরাসরি না বললেও স্পষ্টই আবারও অভিযোগ করেন যে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদেরও এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা সরকারি বৈঠকে ডাক পান না বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্যপালের শপথে বিরোধী দলনেতা, বিজেপি সভাপতি কেউ আসেননি। বিমান বসু এসেছিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ। বিরোধী হিসেবে এসেছিলেন।’’
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার অনেক আগে থেকেই দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এর পরে বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মমতা এবং শুভেন্দু। জেতেন শুভেন্দু। পরে মমতা উপনির্বাচনে জিতে আসেন ভবানীপুর থেকে। এর পরেও মমতাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করতে থাকেন শুভেন্দু। ‘পিসি-ভাইপো লিমিটেড কোম্পানি’ বলে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে থাকেন। পাল্টা মমতাও নানা কথা বলেন। কিন্তু কখনও শুভেন্দুর নাম সে ভাবে বলেননি। তবে লড়াই চলছিলই। তারই মধ্যে আজ সত্যিই অবাক হয়ে গেল বিধানসভা।
তবে সৌজন্য বিনিময় আগেও দেখা গিয়েছে। বিধানসভায় আগের অধিবেশনে তাঁরা হাত জোড় করে নমস্কার বিনিময় করেছিলেন। কিন্তু ঘরে চা খাওয়ার আমন্ত্রণের মতো চমক আগে দেখা যায়নি। মাত্র দু’দিন আগেই বিরোধী দলেনেতার সম্মানহানির অভিযোগে শুভেন্দু সরব হয়েছিলেন। রাজ্যপালের শপথে তাঁকে তৃণমূল সাংসদদের পিছনে দ্বিতীয় সারিতে আসন দেওয়া হয়েছে অভিযোগে অনুষ্ঠান বয়কট করেন তিনি। বয়কট করে বিজেপিও। তা নিয়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়। রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রীর সমান মর্যাদার বিরোধী দলনেতাকে এই ভাবে অপমান করা হয়েছে বলে সরব হয় বিভিন্ন মহল। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই বিধানসভা দেখল অচেনা ছবি। তবে ক্ষণিকের হলেও সেই সাক্ষাতে ঠিক কী কথা হয়েছে, বা কোনও কথা হয়েছে কি না তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।