যোগী আদিত্যনাথের।
ধর্মনিরপেক্ষতা পিছনে টানছে দেশকে, এমন অভিমত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। তাঁর কথায়, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে দেশবাসী গর্ব করেন ঠিকই। কিন্তু ভারতের এই ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবই দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য আর হিন্দু ধর্মের সমৃদ্ধিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে বার বার বাধা দিয়েছে। এতে ভারতের ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি দেশ।
যোগীর আপত্তি সেখানেই। তিনি বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা দেশের মানুষকে উদারপন্থী করেনি। বরং বহু মানসিক সংকীর্ণতার জন্ম হয়েছে এই মতাদর্শ থেকেই। এই সংকীর্ণতাই রামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিস্মিত যোগীর প্রশ্ন, ইতিহাস কি কখনও মিথ্যে বলতে পারে? রামায়ণ-মহাভারতের মতো মহাগ্রন্থে যার উল্লেখ রয়েছে, তা কি কখনও মিথ্যে হতে পারে? রামমন্দির তৈরি নিয়ে অশান্তিও সেই সংকীর্ণতারই ফল বলে মন্তব্য করেছেন যোগী।
শনিবার রামায়ণের গ্লোবাল এনসাইক্লোপেডিয়ার বা আন্তর্জাতিক তথ্যকোষ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন যোগী। ই-বুকের আদলে ওই তথ্যকোষ তৈরি করেছে অযোধ্যা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে সরব হন যোগী। বেশ কয়েকবছর আগে কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট মন্দিরের একটি অভিজ্ঞতার কথাও যোগী টেনে আনেন এই প্রসঙ্গে। যোগী বলেন, ওই মন্দিরের এক গাইড তাঁকে বলেছিলেন, বৌদ্ধধর্মের জন্ম আসলে হিন্দু ধর্ম থেকেই। ওই গাইড নিজে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। কিন্তু হিন্দু ধর্মের উৎস মানতে তাঁর সমস্যা হয়নি। যোগীর কথায়, এই একই মন্তব্য যদি কেউ ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বলতো, তবে তা নিয়ে হই হই পড়ে যেত। যোগীর কথায়, ‘‘এই ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটাই ভারতের যত সমস্যার মূল। ভারতের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ইতিহাসকে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরতে দিচ্ছে না এই ধর্মনিরপেক্ষতা। আমাদের এই সংকীর্ণতা থেকে বে়রিয়ে আসতে হবে। তার জন্য দৃঢ় এবং সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টাও করতে হবে।’’
পরে অবশ্য যোগী সামান্য সুর নামিয়ে বলেছেন, সমাজের সবাই এই একই মনোভাব রাখেন তা অবশ্য নয়। সমাজের একটা অংশ নিজেদের স্বার্থে এই সংকীর্ণতাকে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে চলেছে। তবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে যোগীর পরামর্শ, ধর্মনিরপেক্ষতা যে সংকীর্ণতার জন্ম দেয় তা থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে আসা যায় ততই মঙ্গল। কারণ দেখা যাচ্ছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গিয়ে দেশকে উন্নতির সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে বাধা দিচ্ছে এই ধর্মনিরপেক্ষতা।
ভারতের প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বলতে কী বলতে চেয়েছেন যোগী? ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়েছিল রামের ভাই ভরতের পুত্রের নাম। কিন্তু আমরা তা ভুলে গিয়েছি।’’ এমনকি, আজ যেখানে পাকিস্তান, সেখানেই একসময় রামের ভ্রাতুষ্পুত্র রাজ্য বিস্তার করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন যোগী।