আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। — ফাইল চিত্র।
জন্মহার ২.১ এর নীচে নেমে গেলে সেই জাতির অবলুপ্তি ঘটবে। এমনটাই নাকি দাবি করা হয়েছে গবেষণায়। সেই আবহে এ বার ভারতীয় পরিবারগুলিকেও কমপক্ষে তিন সন্তান নেওয়ার নিদান দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-র প্রধান মোহন ভাগবত!
নাগপুরে আয়োজিত একটি সভায় এমন মন্তব্য করেছেন আরএসএস-প্রধান। সভায় তিনি বলেন, ‘‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি না হলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। জনসংখ্যা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কোনও জাতির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.১ এর নীচে নেমে গেলে সেই সমাজের অবলুপ্তি ঘটে। এ জন্য বাইরে থেকে কোনও আক্রমণের প্রয়োজন নেই। একা একাই ধ্বংস হয়ে যাবে ওই জাতি। এর আগেও বহু ভাষা ও সভ্যতা এ ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সে জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কখনওই ২.১ এর কম হওয়া উচিত নয়।’’
ভারতের জনসংখ্যা নীতির প্রসঙ্গ টেনে মোহনের দাবি, সেখানেও বলা হয়েছে কোনও জাতির জন্মহার ২.১ এর নীচে নামা উচিত নয়। তাই প্রত্যেক পরিবারের উচিত দুইয়ের বেশি, অর্থাৎ কমপক্ষে তিনটি করে সন্তান নেওয়া। জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় থাকলে সমাজও স্থিতিশীল থাকবে। উল্লেখ্য, চার বছর আগেও জনসংখ্যা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মোহন। সে বার অবশ্য বলেছিলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রুখতে সর্বোচ্চ দুই সন্তান নীতির কথা। সেই বক্তব্যের পরেও বিতর্ক শুরু হয়েছিল নানা মহলে। পরে সেই বক্তব্য ফিরিয়ে নিয়ে মোহন বলেন, ভারতের অবিলম্বে একটি সুচিন্তিত জনসংখ্যা নীতি চালু করা উচিত।
এ বারও ভাগবতের মন্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা প্রায়ই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন। এখন আরএসএস প্রধান আরও সন্তান নেওয়ার কথা বলছেন! আগে বিজেপি এবং আরএসএস নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই দ্বন্দ্ব মেটাক।’’ উল্লেখ্য, বিহারে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে সরকার। তাই আরএসএস প্রধানের মন্তব্যের পর এনডিএ জোট-সরকারের সঙ্গী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকেই কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। সমালোচনা করেছেন নীতীশের দল জেডিইউ-এর মুখপাত্র অরবিন্দ নিশাদও। তাঁদের দাবি, সরকারের তরফে বারবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচার চালানো হলেও এই ধরনের মন্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
এর আগে দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকেও বার বার একাধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার নিদান এসেছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর পর এ বার সেই একই সুর শোনা গেল আরএসএস প্রধানের মুখে।