হলুদ কাগজে মোড়া ম্যাঙ্গো ক্যান্ডি বা লাল-সবুজ কাগজে প্যাঁচানো ছোটদের প্রিয় পান পসন্দ ক্যান্ডি। নয়ের দশকে ভারতের প্রতিটা শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর কারিগর হয়ে উঠেছিল মহারাষ্ট্রের রাভালগাঁওয়ের ক্যান্ডি কারখানা।
এর পিছনে যাঁর অবদান রয়েছে তিনি হলেন ব্যবসায়ী বালচাঁদ হিরাচাঁদ দোশী।
১৯৩৩ সালে মহারাষ্ট্রের রাভালগাঁওয়ে প্রথমে চিনি তৈরির কারখানা শুরু করেছিলেন তিনি। ম্যাজিকটা হয় ১৯৪০ সালে। চিনির সঙ্গে আম বা পানের ফ্লেভার মিশিয়ে তিনি তৈরি করে ফেললেন ক্যান্ডি।
সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে তৈরি এই ক্যান্ডি ছোট থেকে বড় সকলেই খুব পছন্দ করতে শুরু করেন। দ্রুত তা সারা ভারতে পসার জমিয়ে ফেলে।
এই ক্যান্ডির কারিগর বালচাঁদের জন্ম মহারাষ্ট্রের শোলাপুরে এক জৈন পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন সুতোর ব্যবসায়ী। জন্মের কিছু দিন পরেই মাকে হারান বালচাঁদ।
শোলাপুর গভর্মেন্ট হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক হন। উচ্চ শিক্ষার জন্য পুণের ডেকান কলেজে ভর্তিও হন। কিন্তু পারিবারিক ব্যবসায় হাল ধরতে গিয়ে মাঝপথেই কলেজ ছাড়তে হয় তাঁকে।
পারিবারিক সুতোর ব্যবসায় কিছুতেই মন বসছিল না বালচাঁদের। মাথার মধ্যে তখন ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো পরিকল্পনা। পারিবারিক ব্যবসা থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমে হলেন রেলের ঠিকাদার।
তার পর ১৯৩৩ মহারাষ্ট্রের রাভালগাঁওয়ের ওই চিনির কারখানা। ১৯৪০ সাল থেকে শুরু করে দিলেন ক্যান্ডি তৈরি। ভারতের যতগুলো ক্যান্ডি প্রস্তুত কারখানা রয়েছে তার মধ্যে যা অন্যতম।
পরবর্তীকালে শিপিং, বিমান পরিবহণ, ইনসিয়োর্যান্স, জাহাজ এবং গাড়ি ব্যবসাতেও পসার জমিয়েছিলেন তিনি।
ছোটদের মুখে হাসি ফোটানো ক্যান্ডির কারিগরের ব্যক্তিগত জীবনে ছিল অনেক যন্ত্রণা। পড়াশোনা চলাকালীন ১৯০০ সালে শোলাপুরের এক ব্যাঙ্ক কর্মীর মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু প্রথম সন্তানের জন্মের সময়ই মৃত্যু হয় স্ত্রীর।
স্ত্রীর মৃত্যুশোক কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। ১৩ বছর পর পারিবারিক চাপে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই বিয়েটাও খুব একটা সুখের হয়নি। দ্বিতীয় পক্ষের দুই সন্তানেরও মৃত্যু হয় খুব কম বয়সে।
১৯৪৯ সালে স্ট্রোক হয় বালচাঁদের। অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে ১ বছরের মধ্যে সমস্ত ব্যবসা থেকে অবসর নেন তিনি। পরবর্তী সময় দ্বিতীয় স্ত্রী কস্তুরবাই তাঁর দেখভাল করেন। পাশে ছিলেন একমাত্র সন্তান চতুরও। ১৯৫৩ সালে গুজরাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
বালচাঁদের ক্যান্ডি তৈরির জার্নিটা শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্রের নাসিকে আসার পর। সে সময় ব্যবসার জন্য জমি কিনতে তিনি ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান নাসিকে। রাভালগাঁওয়ে দেড় হাজার একর জমি কিনে ফেলেন। আখের ব্যবসা খুব একটা লাভজনক ছিল না জেনেও স্থানীয় চাষিদের কাজে লাগিয়ে শুরু করেন আখ চাষ।
ইঞ্জিনিয়ার, কেমিস্টদের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর চালু করে দিলেন চিনির কারখানা। এই কারখানা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। রাভালগাঁওয়ের প্রতিটা পরিবারের অন্তত এক জন সদস্য এই কারখানায় কাজ পান।
এর ৭ বছর পর বাজারে আসে সেই জনপ্রিয় ক্যান্ডি। এখন যদিও আরও অনেক ক্যান্ডি চলে এসেছে বাজারে। এসেছে সুস্বাদু চকোলেট। কিন্তু তা সত্ত্বেও ৮০ বছর ধরে সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে রাভালগাঁওয়ের ক্যান্ডি।