(বাঁ দিক থেকে) জয়রাম রমেশ, জগদীপ ধনখড় এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভা সোমবার তাঁদের ‘খুনসুটি’ দেখেছিল। সাংসদদের মধ্যে উঠেছিল হাসির রোল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার অধ্যক্ষ (চেয়ারম্যান) জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের তরজায় উত্তপ্ত হল অধিবেশন। এমনকি, মেজাজ হারিয়ে একসময়ে ধনখড় বলে বসলেন, খড়্গের জায়গায় কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের বিরোধী দলনেতা হওয়া উচিত!
যদিও সংসদীয় বিধি অনুযায়ী, বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়া কংগ্রেসেরই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা স্থির করার ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ধনখড় মত প্রকাশের অধিকারী নন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবিতে বিক্ষোভের সময় খড়্গের আসন ছেড়ে উঠে যাওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করে ধনখড় বলেন, ‘‘আপনি এ ভাবে বার বার নেমে এসে চেয়ারকে (অধ্যক্ষ পদ) অসম্মান করতে পারেন না। এ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এবং রাজ্যসভার অধিবেশনে কখনওই চেয়ারের প্রতি এতটা অবহেলা করা হয়নি। যদিও আমি সব সময় আপনাকে মর্যাদা দিয়েছি।’’
এর পর কংগ্রেসের জয়রাম বলার জন্য উঠে দাঁড়ালে তাঁর উদ্দেশে ধনখড় বলেন, ‘‘আপনি এত বুদ্ধিমান, এত প্রতিভাবান যে আপনার অবিলম্বে খড়্গের আসন গ্রহণ করা উচিত। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আপনিই তাঁর কাজ করে দিচ্ছেন। তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলছেন।’’ খড়্গে এ সময় পাশে বসা কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর দিকে চেয়ে ধনখড়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘যিনি আমাকে পদে বসিয়েছেন, তিনি এখানে বসে রয়েছেন। আপনি তাঁকে অসম্মান করছেন। জয়রাম রমেশ আমাকে পদে বসাননি।’’
ক্ষুব্ধ কংগ্রেস সভাপতি এর পরে সরাসরি জাতাপাতের বিভাজনের অভিযোগ তোলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘‘আপনার মস্তিষ্কে বর্ণবাদী ব্যবস্থা গেঁথে গিয়েছে। তাই জয়রাম খুব বুদ্ধিমান আর আমি অকর্মণ্য।’’ খড়্গে এই মন্তব্যে তাঁর ‘দলিত আত্মপরিচয়’ উল্লেখ করতে চেয়েছেন বলেই কংগ্রেসর একটি সূত্রের খবর।
রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোর সময় দু’দিন আগে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। সোমবার বিতর্কের সময় ৮১ বছরের কংগ্রেস নেতা অধ্যক্ষ (চেয়ারম্যান) জগদীপ ধনখড়কে বলেন, ‘‘হাঁটুর ব্যথার কারণে আমি বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে পারছি না। আপনি অনুমতি দিলে বসতে পারি।’’ অধ্যক্ষ তৎক্ষণাৎ খড়্গেকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আপনি বসেই বক্তৃতা করতে পারেন।’’
খড়্গের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভে তিনিও মনে ‘ব্যথা’ পেয়েছেন বলে সোমবার দাবি করেছিলেন ধনখড়। সে সময় সরকার পক্ষের সাংসদদের একাংশকেও হাসিতে অংশ নিতে দেখা যায়। খড়্গে তখন বলেন, ‘‘এ ভাবে কিন্তু আমাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মাননীয় অধ্যক্ষও আমাকে বিভ্রান্ত করছেন।’’ এক পরেই ধনখড়ের ঝটিতি জবাব, ‘‘বেশ তো, এই অংশটি না হয় মুছে (সভার কার্যবিবরণী থেকে) দেব। এমনটা আমি করেই থাকি।’’ সভায় উপস্থিত কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর ঠোঁটেও তখন ছিল হাসির রেখা! খুনসুটির সেই আবহ বদলে গেল মঙ্গলবার।