—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ঘুষ-কাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই শিল্পপতি গৌতম আদানিকে গ্রেফতার করার দাবিতে সরব হলেন কংগ্রেস, শিবসেনা, আপ-এর শীর্ষ নেতারা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রাত পর্যন্ত নীরবতা বজায় রাখলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, সাকেত গোখলে, মহুয়া মৈত্র বা সাগরিকা ঘোষের মতো কয়েক জন তৃণমূল সাংসদ বিচ্ছিন্ন ভাবে নিজেদের সমাজমাধ্যমের হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করলেও বা বক্তব্য জানালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা তৃণমূলের সংসদীয় নেতাদের কোনও প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না। আজ নবান্নে অন্য কিছু বিষয় নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মমতা। কিছুটা রহস্য রেখে এইটুকু বলেছেন, “আমাদের ঝড়, বন্যা, জাল নোট আমদানি, জামদানির মতো বিভিন্ন বিষয় সামলাতে হচ্ছে!” সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নও তিনি নেননি আজ।
এক বছর আগেই রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেছিলেন, “দরপত্রে সর্বোচ্চ দর হাঁকা অ্যাপসেজ় (আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জ়োন) সংস্থাকে তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দেওয়া হয়েছিল। তারপরে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও জাহাজ মন্ত্রকের থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শর্তযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিয়েছে। তার সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য সরকার ও আদানি গোষ্ঠী কাজ করছে। কথাবার্তা চলছে।” কী সেই পর্যবেক্ষণ, তা বলা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তৃণমূল সরকার এই অবস্থান নিয়েই চলেছে যে রাজনীতির সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক নেই। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আদানি গোষ্ঠীকে নিশানা, তা ঘিরে বিতর্ক এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিল্পপতিদের সম্পর্ক বা রাজ্যে আদানিদের লগ্নি—এই দু’টি বিষয় রাজ্য সরকার আলাদা ভাবে দেখছে বলেই তৃণমূলের মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল। আজ এই কারণেই আদানিকে নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বা মুখ্যমন্ত্রী জলঘোলা করতে চাননি কি না, এই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
এই শিল্পগোষ্ঠী তামিলনাড়ু সরকারকে ঘুষ দিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ওই রাজ্যের শাসক দল ডিএমকে-ও বিষয়টি নিয়ে নীরব। শরদ পওয়ারের এনসিপি-ও চুপ। আাবার কংগ্রেসের তরফে রাহুল গান্ধী সাংবাদিক বৈঠক করলেও দলের বহু প্রবীণ নেতাই আদানি নিয়ে নীরব।
তৃণমূলের নেতারা বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ঘুষের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে শিল্পপতিদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেন বলে অভিযোগ আসে, এই শিল্পপতির নাম তাতে রয়েছে। কেন্দ্র, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ্যে বলা উচিত, অভিযোগটিকে কী ভাবে দেখা হচ্ছে। এই শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে যে সব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখার কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এই ঘটনার। যদি আমেরিকা এই ধরনের তদন্ত শুরু করতে পারে, ভারত কেন পারে না?” লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কথায়, “আদানি গোষ্ঠী এবং ভক্তবৃন্দ উভয়েই নীরব। বোধহয় অপেক্ষা করছেন, মোদীজি ট্রাম্পকে ফোন করে বিষয়টির ফয়সালা করবেন।”