PM Narendra Modi

যত কাদা ছুড়বেন, তত বেশি পদ্ম ফুটবে! আদানি এড়িয়ে রাজ্যসভায় পাল্টা আক্রমণে প্রধানমন্ত্রী মোদী

লোকসভার পর রাজ্যসভার ভাষণেও আদানি প্রসঙ্গ এড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের স্লোগানের মধ্যেই ভাষণ দিলেন। আক্রমণ করলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫১
Share:

রাজ্যসভায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

আদানি প্রসঙ্গে নীরবতাই বজায় রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভার পর বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার ভাষণেও ‘আদানি’ শব্দটি উচ্চারণ করলেন না। তবে এই নিয়ে বিতর্কের আবহে কৌশলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানালেন। বললেন, ‘‘বিরোধীদের হাতে কাদা রয়েছে বলেই ছুড়ছেন। যত কাদা ছুড়বেন, ততই পদ্ম ফুটবে।’’

Advertisement

রাজ্যসভার ভাষণে মোদীকে আরও আক্রমণাত্মক দেখিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁর আক্রমণের মূল নিশানায় ছিল কংগ্রেস। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘নেহরুকে নিয়ে অবহেলা হলে কয়েক জন অভিযোগ করেন। গান্ধী-নেহরু পরিবারের কেউ নেহরু পদবি ব্যবহার করেন না কেন?’’ তাঁর দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে সরকার ফেলার যে অভিযোগ করে বিরোধীরা, তারও পাল্টা দিয়েছেন মোদী। এই প্রসঙ্গেও কংগ্রেসকে বিঁধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাম নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সরকার ফেলতে ৫০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।’’

লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের গোড়া থেকেই স্লোগান তোলে বিরোধীরা। কখনও শোনা যায়, ‘আদানি-মোদী ভাই ভাই’ আবার কখনও ‘মোদীজি জবাব দাও’ স্লোগান। তবে বিরোধীদের হট্টগোল-স্লোগানের মধ্যেও আদানি নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি প্রধানমন্ত্রী। পরিবর্তে কৌশলে নিজের সরকারের উন্নয়নের কাহিনি তুলে ধরেছেন। ক্রমাগত স্লোগান-হট্টগোলের মধ্যেও নিজের ভাষণে খেই হারাননি প্রধানমন্ত্রী। বরং ধীরে-সুস্থে নিজস্ব ঢঙেই বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিয়েছেন। বক্তৃতার মাঝে কয়েক ঢোক জলও খেয়েছেন। বিরোধীদের হট্টগোলের পাল্টা হেসে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘আপনারা এখানে চেঁচামেচি করছেন। মানুষ আপনাদের কথা শুনছে না। আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করেছি।’’

Advertisement

তবে লোকসভার থেকে রাজ্যসভায় আরও আক্রমণাত্মক লেগেছে মোদীকে। ভাষণের শুরু থেকেই কংগ্রেসকে নিশানা করেন মোদী। বলেন, ‘‘কংগ্রেসকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদের দুর্দশা বুঝতে পারছি। ভারতে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি। উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস।’’ কংগ্রেস সরকারের আমলে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেও সরব হন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আগের সরকার যদি উন্নয়নমূলক কাজ করত, তা হলে আজ এত পরিশ্রম করতে হত না।’’ কংগ্রেস শুধু ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’ করে বলে আক্রমণ করেছেন মোদী। তার কথায়, ‘‘ওরা শুধু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে, তাই দেশবাসীর দিকে তাকাতে পারেনি। ওদের উদ্দেশ্যে অন্য।’’

গত ৩১ জানুয়ারি ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শেষ হয়েছে। কংগ্রেসের সেই কর্মসূচির পুরোভাগে ছিলেন রাহুল গান্ধী। ১২৫ দিনের এই যাত্রায় রাহুল চর্চিত হয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই কর্মসূচি সাড়া ফেলেছে বলে দাবি কংগ্রেসের। এই আবহে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় সরাসরি গান্ধী পরিবারকে যে ভাবে নিশানা করলেন মোদী, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ তাতে আলাদা মাত্রা পেয়েছে।

আদানি বিতর্কের মধ্যে বুধবার লোকসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ৭৫ মিনিটের সেই ভাষণে ‘আদানি’ শব্দটি উচ্চারণ না করে কৌশলে বিরোধীদের আক্রমণ করেছিলেন মোদী। বলেছিলেন, ‘‘দেশের মানুষ মিথ্যা, নোংরা অভিযোগ বিশ্বাস করবে না।’’ বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার ভাষণেও একই কৌশল বজায় রাখলেন মোদী। ৮৪ মিনিটের ভাষণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোদীর বক্তব্যে বার বার উঠে এসেছে তাঁর সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মানুষের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেই কাজ আমরা করি। আমরা আরামের রাস্তা বেছে নিইনি। পরিশ্রমের রাস্তা বেছেছি। যখন দেখি আমাদের পরিশ্রমের ফলে দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটেছে, তখন এই কষ্ট সার্থক হয়।’’

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং কারচুপি করে নিজেদের শেয়ারের দর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার লগ্নি গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশে। শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সুসম্পর্ক’কে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। আদানির সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক কী? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল গান্ধী। আদানিকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। এই আবহে আদানি প্রসঙ্গ এড়িয়ে কৌশলে নিজের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে বিরোধীদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিলেন মোদী।

কংগ্রেসকে আক্রমণের মধ্যেই নেহরুর প্রসঙ্গ টানেন মোদী। বলেন, ‘‘আমরা যদি কখনও নেহরুর নাম নিতে ভুলে যাই, তখন কেউ কেউ (কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবারের সদস্য) নানা অভিযোগ করেন। নেহরুজি মহান ব্যক্তি ছিলেন। তা হলে কেউ (গান্ধী এবং নেহরু পরিবারের সদস্য) ওঁর পদবি ব্যবহার করেন না কেন?’’ এর পরেই মোদী বলেন, ‘‘এই দেশ কোনও পরিবারের সম্পত্তি নয়।’’ নেহরুর নাম নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণের পর পরই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার প্রসঙ্গ টানেন মোদী। বলেন, ‘‘ওরা (কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা) বলে আমরা নাকি রাজ্যে সমস্যা তৈরি করি। কিন্তু ওরাই ৯০ বার নির্বাচিত সরকারকে ফেলেছে। কংগ্রেসের এক প্রধানমন্ত্রী ৫০ বার ৩৫৬ ধারা ব্যবহার করে নির্বাচিত রাজ্য সরকার ফেলেছেন। তিনি হলেন ইন্দিরা গান্ধী।’’

আদানিকাণ্ডে বিরোধীদের স্লোগানের মধ্যেই নানা ক্ষেত্রে নিজের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন মোদী। উন্নয়ন প্রসঙ্গে ঘরে ঘরে এলপিজি গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কথা যেমন ভাষণে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী, তেমনই বিদ্যুৎ পরিষেবা, শৌচালয়, জনধন প্রকল্প, মাতৃবন্দনা প্রকল্পের সুফলের কথা বলেছেন। পাশাপাশি কৃষক, আদিবাসীদের পাশে তাঁর সরকার যে ভাবে দাঁড়িয়েছে, সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন। আবার, করোনার প্রতিষেধকে ভারতের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।’’ এত উন্নয়নের কাজ করা যে মোটেই সহজ নয়, তা-ও বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘এ জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আনন্দের সঙ্গে এই পরিশ্রম করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement