Opposition meeting in Patna

পটনায় বিরোধী বৈঠকের আগে কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়ছে! তৈরি হচ্ছেন মমতা-কেজরী-অখিলেশ

সর্ববৃহৎ বিরোধী দল কংগ্রেসকে বিরোধী জোটে ‘দাদাগিরি’ করতে না-দিতে অনেক আগে থেকেই সক্রিয় একাধিক আঞ্চলিক দল। তৃণমূল তাদের অন্যতম।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ২১:৪৮
Share:

নরেন্দ্র মোদীকে হারানোর লক্ষ্যে বিরোধী জোটের বৈঠক বসছে পটনায়। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা কি চাপে রাখতে চাইছেন রাহুল-খড়্গেদের? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠক আগামী শুক্রবার (২৩ জুন)। তার আগে হঠাৎই টানাপড়েন বিরোধী শিবিরের অন্দরে। ঘটনাচক্রে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাপ বাড়ছে কংগ্রেসের উপর। আর সেই সঙ্গেই লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী শিবিরের সলতে পাকানোর ঘটনাপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, মমতার ‘সুপারিশ’ মেনেই দিল্লির বদলে বিহারে বিরোধী জোটের বৈঠকের আয়োজন করেছেন নীতীশ। আবার বৈঠকের দিন বদল হয়েছিল কংগ্রেসের অনুরোধে। কিন্তু নীতীশের ডাকা সেই বৈঠকের সপ্তাহখানেক আগে, গত ২৪ ঘণ্টায় তিন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের তরফে যে মন্তব্য শোনা গিয়েছে, তাতে বিরোধী ঐক্যের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেই তুলতে পারেন। যদিও একটি বিষয় আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সর্ববৃহৎ বিরোধী দল কংগ্রেসকে বিরোধী জোটে ‘দাদাগিরি’ করতে না-দিতে অনেক আগে থেকেই সক্রিয় একাধিক আঞ্চলিক দল। তৃণমূল তাদের অন্যতম।

শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সিপিএম-সখ্যের প্রশ্ন তুলে মমতা বিঁধেছেন কংগ্রেসকে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বীর সাভারকরের জীবনী বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সহযোগী শিবসেনা (বালাসাহেব)-এর প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। অন্য দিকে, মমতার ‘সূত্র’ মেনেই শনিবার উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোর জন্য ‘জায়গা’ ছাড়ার বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেসকে।

Advertisement

এরই মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)-ও শনিবার পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের প্রেক্ষিতে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে মমতাকে। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ ১৩ জন আপ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে কেজরীর দল!

কংগ্রেসকে কী বার্তা মমতার?

নীতীশের বৈঠকে মমতার পাশাপাশি যোগ দেওয়ার কথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিরও। কিন্তু বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা নিয়ে তাঁর যে আপত্তি রয়েছে, শুক্রবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। কাকদ্বীপে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’-এর সমাপ্তি কর্মসূচিতে মমতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস অনেক রাজ্য চালিয়েছে। সিপিএমের সবচেয়ে বড় দোসর। বিজেপির বড় দোসর। আর পার্লামেন্টে (সংসদ) আমাদের সাহায্য চাও। আমরা করব তা-ও বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু মনে রেখো, বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে ঘর করে আমাদের কাছে বাংলায় সাহায্য চাইতে আসবে না।’’ পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে বিজেপি, বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেসও ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা পটনা-বৈঠকের আগে কংগ্রেসকে সরাসরি বিজেপি এবং সিপিএমের ‘দোসর’ বলায় বিতর্ক অন্য মাত্রা পেল। পটনায় নীতীশের বৈঠকে তিনি নিজে থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন মমতা। কংগ্রেসের তরফ থেকে দলের সভাপতি খড়্গের সঙ্গে রাহুলও বৈঠকে থাকতে পারেন বলে খবর।

মমতার অনুপ্রেরণায় অখিলেশের ‘সূত্র’?

এনডিটিভি আয়োজিত একটি আলোচনাচক্রে শুক্রবার অখিলেশ বলেন, ‘‘বড় জাতীয় দলের সমর্থন পেলে আমরা উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনেই বিজেপিকে হারাব।’’ বিরোধী শিবিরের নেতাদের মতে, এ ক্ষেত্রে ‘বড় জাতীয় দল’ বলতে কংগ্রেসকেই বোঝাতে চেয়েছেন প্রয়াত মুলায়ম সিংহ যাদবের পুত্র। তিনিও মমতার মতোই কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্দেশে ‘জায়গা’ ছাড়ার বার্তা দিতে চেয়েছেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোর জন্য ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক দলগুলিকে ‘জায়গা’ ছাড়ার সূত্র দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন রুখতে মমতার এই তত্ত্বে সায় দেয়নি। কারণ ওই সূত্র মেনে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টিকে জায়গা ছাড়তে গেলে লোকসভায় অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন না রাহুল-খড়্গেরা। এই পরিস্থিতিতে অখিলেশও ভোটের আগের কংগ্রেসের উপর বাড়াতে চাইছেন কি না, প্রশ্ন উঠেছে। যদিও আসন রফা নিয়ে তাঁর দল যে অনমনীয় কোনও অবস্থান নেবে না, তা-ও জানিয়েছেন অখিলেশ। ওই আলোচনা সভায় তিনি অতীতে কংগ্রেস এবং বিএসপির সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টি সব সময়ই সহযোগীর প্রতি উদারতা দেখিয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে চাপ দেয়নি।’’ তাঁর এই মন্তব্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে দলের একাংশ মনে করছে।

মমতার পাশে কেজরীওয়াল

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে বাংলায় তৃণমূলকে অস্বস্তিতে না-ফেলার উদ্দেশ্যে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আপ। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুক্রবার মনোনয়নের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ১৩ জন আপ প্রার্থীর নাম রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই প্রার্থীরা কারা, তার খোঁজ শুরু করেছে দল। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে আপ জানাতে চলেছে, কারা আপের নামে মনোনয়ন জমা দিয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ জানানো হোক। ঘটনাচক্রে, নীতীশের পাশাপাশি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার জন্য মমতা এবং কেজরীও সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখিয়েছেন। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব স্বীকার করার প্রশ্নে গোড়া থেকেই নিজেদের অনীহার কথা জানিয়েছে আপ এবং তৃণমূল। পাশাপাশি, জাতীয় রাজনীতিতে মমতা এবং কেজরীওয়াল— দুই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁদের দলের ‘বোঝাপড়া’র দিকটিও বহু বার প্রকাশ্যে এসেছে। বস্তুত, নবান্নে নীতীশ-মমতা বৈঠকের এক মাস পরে গত ২৩ মে নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন কেজরী। সঙ্গে ছিলেন আপের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা— পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান, সাংসদ রাঘব চড্ডা এবং দিল্লির মন্ত্রী আতিশী।

এবং উদ্ধব

মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সহযোগী শিবসেনা (বালাসাহেব) দলের প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও শনিবার কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন। তবে ‘হাত’ শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নয়, তাঁর ক্ষোভ কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের আচরণ নিয়ে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব কর্নাটকে স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জীবনী বাদ দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন। দলের মুখপত্রে লেখা নিবন্ধে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাভারকর আমাদের কাছে বৈগ্রহিক চরিত্র।’’ মমতা, অখিলেশ, কেজরীর মতো উদ্ধবও আগামী শুক্রবারের পটনা বৈঠকে আমন্ত্রিত। তার এই অবস্থানও কংগ্রেসের উপর বাড়াবে বলেই বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন।

পটনা বৈঠকের উদ্যোগ যে ভাব শুরু হয়েছিল

গত ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নীতীশ। সে সময় প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বির‌োধী বৈঠক ডাকুন।” ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটের আগে জয়প্রকাশের উদ্যোগেই বিহার থেকে কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলার উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল।

প্রাথমিক ভাবে ১২ জুন পটনায় বিরোধী শিবিরের বৈঠকের আয়োজনের কথা জানিয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু পরে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। জেডিইউ সূত্রের খবর, মূলত কংগ্রেসের অনুরোধেই এই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বা রাহুল গান্ধী কেউই ১২ জুন বৈঠক হলে হাজির থাকতে পারতেন না। দু’জনেরই ওই দিন পূর্বনির্ধারিত অন্য কর্মসূচিতে ছিল। তা ছাড়া ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও ওই দিন তাঁর রাজ্যে একটি বাঁধ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান রয়েছে বলে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement