Gangasagar

অমৃতকুম্ভ

হিন্দু ভারত নির্মাণের বার্তাটিকে নবকলেবর দেওয়ার সময় হয়েছে কি না, প্রচার-বিশারদ প্রধানমন্ত্রী ভেবে দেখতে পারেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪২
Share:

ভারতীয় মূল্যবোধে যাঁরা শ্রদ্ধাশীল, আজ তাঁদের কাছে একটি বিশেষ দিন— সোমবার প্রয়াগরাজ তথা ইলাহাবাদে কুম্ভমেলার সূচনালগ্নে সমাজমাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘ভারতীয় মূল্যবোধ’-এর ধারণাটিকে মহাকুম্ভে ভরে রাখার এই তরিকা এখন কেবল পরিচিত নয়, অতিব্যবহারে ঈষৎ ক্লান্তিকর। হিন্দু ভারত নির্মাণের বার্তাটিকে নবকলেবর দেওয়ার সময় হয়েছে কি না, প্রচার-বিশারদ প্রধানমন্ত্রী ভেবে দেখতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে বরং নজর কেড়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি কুম্ভমেলা বিষয়ক একাধিক ভাষণে ও বার্তায় যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তার নাম অর্থনীতি। এই সমারোহের জন্য রাজ্য সরকার কেন এমন বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, সেই প্রশ্নকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, প্রায় দেড় মাসের কুম্ভমেলা থেকে অন্তত দু’লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে, তাতে রাজ্যের মঙ্গল, দেশের সমৃদ্ধি। হিসাবটি স্পষ্টতই আনুমানিক, কিন্তু সেই অনুমানকে অযৌক্তিক বলা কঠিন। পরিবহণ, হোটেল ও অন্যান্য বাসস্থান, নানাবিধ সামগ্রী কেনাকাটা— বিবিধ খাতে গড়পড়তা তীর্থযাত্রী যে খরচ করেন তার পরিমাণ কম নয়। ২০১৯ সালের অর্ধকুম্ভ উপলক্ষে প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষের সমাগম এবং এক লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল, পূর্ণকুম্ভে জনসমাগম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, মাথাপিছু ব্যয় যদি বাড়ে তবে বাণিজ্যের অঙ্ক যোগীবরের অনুমানকে ছাড়িয়ে যাবে, অমৃতকুম্ভ উপচে পড়বে।

Advertisement

১৪৪ বছর পরে ফিরে আসা গ্রহনক্ষত্রের বিশেষ সংস্থান আকাশেই থাকুক, ভক্তজনের ভক্তিও তাঁদের হৃদয়েই বিরাজ করুক, কিন্তু কুম্ভমেলার এই বাণিজ্যিক মূল্য-বোধকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব না দিতে পারলে এই পৃথিবীতে বিশ্বগুরু হওয়ার স্বপ্ন দেখে কোনও লাভ নেই। ধর্মবিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে ও তাকে নিরন্তর উৎসাহিত করে চলা রকমারি অনুষ্ঠান ও উৎসব দুনিয়া জুড়ে এক বিপুল বাণিজ্যের উৎস। একটি হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ‘রিলিজিয়াস টুরিজ়্‌ম’ বা ধর্মাশ্রিত পর্যটন থেকে ২০২৩ সালে প্রায় ২৫০০০ কোটি ডলারের বাজার তৈরি হয়েছিল, এবং সেই বাজার বছরে ১৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে স্ফীত হচ্ছে। স্পষ্টতই, এই আন্তর্জাতিক মহাসমুদ্রে মহাকুম্ভের বাণিজ্যের অঙ্কটি বিন্দুমাত্র। কিন্তু এ-বছরের দৃশ্যাবলি জানিয়ে দেয়, সেই অঙ্ক ভবিষ্যতে অন্য মাত্রায় পৌঁছতে পারে। কেবল জনসংখ্যায় নয়, মেলা এবং তার আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো ও কর্মকাণ্ডের পরিধিতেও এ বার বিপুল অগ্রগতি দেখা গিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির প্রবল ব্যবহার, যা অতি দ্রুত প্রবলতর হবে।

তবে এই অগ্রগতিকে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন হবে মেলার আয়োজনকে নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়া। অস্বাভাবিক জনসমাগমই এই ধরনের মেলার প্রাণশক্তি, কিন্তু কেবল সংখ্যা থেকে যথেষ্ট বাণিজ্য আসে না, দেশে ও দুনিয়ায় যাঁদের যথেষ্ট ক্রয়ক্ষমতা আছে তাঁদের কী ভাবে আকর্ষণ করা যায় সেই বিষয়ে মন দেওয়া দরকার। কেবল কুম্ভমেলায় নয়, দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত অন্য বড় বড় ধর্মাশ্রিত উৎসবগুলিতেও। যথা, গঙ্গাসাগর। মহাকুম্ভের তুলনায় এই মেলার আকর্ষণ স্পষ্টতই অনেক কম, বাণিজ্য আরও কম। অথচ দেশের এক নম্বর নদী যেখানে সাগরে এসে পড়ছে, সেই স্থানটি নিছক ভৌগোলিক কারণেই অত্যন্ত মহিমময়। তদুপরি তীর্থস্থান হিসাবে তার আছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মেলা ও স্নানের আয়োজনে বড় রকমের সরকারি ব্যবস্থাপনা চলে যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে। অথচ এমন একটি সম্ভাবনাময় উৎসবকে কেন্দ্র করে যথার্থ পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেই, এমনকি সচেতনতাও নেই। থাকলে, গঙ্গাসাগর মন্থনের ফলে অমৃতকুম্ভ হাতে উঠে আসতে পারতেন সুহাসিনী বঙ্গলক্ষ্মী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement