রাজনাথ সিংহ ও অমিত শাহ।
বিধানসভা ভোট করানোর জন্য জম্মু-কাশ্মীরকে ‘সন্ত্রাস-মুক্ত’ করার কাজে নেমে পড়লেন অমিত শাহ।
আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার আগে সত্যপাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘স্থানীয় পরিস্থিতি জানিয়েছি। নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কাজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের আগে অমিত শাহ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান রাজীব জৈনের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম ও প্রধান নীতি হবে কাশ্মীরে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মোকাবিলা করা। গত বছরের জুলাই মাস থেকে জম্মু-কাশ্মীরে বকলমে কেন্দ্রের শাসন চলছে। প্রথমে ছ’মাস রাজ্যপালের শাসন। তার পর ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হওয়ায় পরে জুলাই থেকে আরও ছ’মাস রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ বছরের শেষে বিধানসভা ভোট হতে পারে। তার আগে কাশ্মীরকে পুরোপুরি সন্ত্রাস-মুক্ত করতে চাইছে মোদী সরকার।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরে এত দিন সন্ত্রাসের জন্য পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীদের দায়ী করা হত। এখন কাশ্মীরি তরুণরাই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে হামলাও এক স্থানীয় তরুণই চালিয়েছিল। ফলে জঙ্গি সংগঠনের নেতারা নিহত হলেই কি সন্ত্রাসবাদের সমস্যার সমাধান হবে?
সরকারি পরিসংখ্যানও বলছে, কাশ্মীরে এখন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীর থেকে জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানো ভূমিপুত্রদের সংখ্যা বেশি। গত পাঁচ মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর জোরদার অভিযানে কাশ্মীরে ১০১ জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ২৫ জন বিদেশি। বাকি ৭৬ জনই স্থানীয় তরুণ। তারা জইশ, লস্কর, হিজবুল বা আল-কায়দার অনুগামী আনসার ঘাওয়াত-উল-হিন্দে নাম লিখিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, সেনা, আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশের নেতৃত্বে যেমন জোরদার অভিযান হচ্ছে তেমনই স্থানীয় যুবকদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, গ্রীষ্ম পড়েছে। এখন পাকিস্তানের তরফে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টাও বাড়বে। ফলে অমরনাথ যাত্রা ও তার পরে বিধানসভা ভোট করা প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এত দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মূলত রাজনাথ সিংহই কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখভাল করতেন। এ বার অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। রাজনাথ প্রতিরক্ষায়। ফলে অমিত শাহই মূলত কাশ্মীর দেখভাল করবেন। কিন্তু ভোটের আগে উপত্যকাকে সন্ত্রাস-মুক্ত করে সেনার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি কর্তারা মনে করছেন, অমিত শাহ-রাজনাথ সিংহ-অজিত ডোভাল ত্রয়ীর ভূমিকা কাশ্মীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আজ রাজনাথ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজ্যপাল জানান, এ দিনের বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়নি। তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। তবে ১ জুলাই থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হবে। তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অমিত শাহ আজ টুইট করে বলেছেন, ‘‘দেশের সুরক্ষা আর দেশবাসীর কল্যাণ মোদী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। মোদীজির নেতৃত্বে সেই অনুযায়ী কাজ করার সবরকম চেষ্টা করব।’’