ফাইল চিত্র।
ডাক্তারিতে ভর্তির সময়ে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পারিবারিক আয়ের পূর্বনির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমা পুনর্বিবেচনা করবে কেন্দ্র। বার্ষিক পারিবারিক আয় আট লক্ষ টাকার কম, সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’-এর এমন পরীক্ষার্থীদের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিতে রাখা হয়েছিল। আজ কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, ওই ঊর্ধ্বসীমা খতিয়ে দেখা হবে। এর জন্য চার সপ্তাহ সময় চেয়েছে কেন্দ্র। তত দিন নিটে স্নাতকোত্তরের কাউন্সেলিং স্থগিত থাকবে বলে কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান।
নিট-এ বর্তমানে ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ, তফসিলি জাতিদের জন্য ১৫ শতাংশ, তফসিলি জনজাতিদের জন্য ৭.৫ শতাংশ এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের বেছে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত পদ্ধতির বিরোধিতা করে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় আলাদা। সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্ত ভাতা জায়গা বিশেষে আলাদা হয়। তাঁরা কোন এলাকায় কর্মরত রয়েছেন, তার উপরে আয় নির্ভর করে। কাজেই এ ভাবে দেশ জুড়ে একটিই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন আবেদনকারীরা। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, সংবিধানের সমান অধিকার সংক্রান্ত ১৪, ১৫ এবং ১৬ নম্বর ধারা মেনে, যুক্তিনিষ্ঠ মাপকাঠি নির্ধারিত হয়েছে।
আদালত সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, কিসের ভিত্তিতে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য বার্ষিক আট লক্ষ টাকা আয়ের মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া হল। প্রসঙ্গত, ওবিসি-র মধ্যে অবস্থাপন্নদের (ক্রিমি লেয়ার) চিহ্নিত করার মাপকাঠিও ওই বার্ষিক আট লক্ষ টাকা আয়। এ দিনও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে একই প্রশ্ন তোলে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে কোনও সামাজিক, আর্থ-সামাজিক বা জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য থাকা উচিত। আপনারা তো হাওয়া থেকে আট লক্ষ টাকা ঠিক করে দিতে পারেন না। এতে তো যাঁদের অবস্থা এক নয়, তাঁদের এক করে দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষেরা ওবিসি-দের মতো সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে অনগ্রসর নন। এটা নীতিগত বিষয়। কিন্তু এই নীতি সাংবিধানিক কি না, তা নির্ধারণ করতে আদালত জানতে চায়, কোন যুক্তিতে এই নীতি স্থির হল?’’
বস্তুত, এ ক্ষেত্রে সারা দেশে একই অঙ্কের আয়ের ঊর্ধ্বসীমা কী ভাবে ধার্য হতে পারে, যিনি কোনও মেট্রো শহরে থাকেন এবং যিনি গ্রামে থাকেন, তাঁদের দু’জনের আয় কী ভাবে তুলনীয় হতে পারে— সেই প্রশ্নও এ দিন তুলেছে বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ। সলিসিটর জেনারেল জানান, চার সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। বিচারপতি সূর্য কান্ত অবশ্য আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে ‘কার্যকরী’ বলে প্রশংসা করে বলেন, এই উদ্যোগে কেন্দ্রকে সাহায্য করা উচিত রাজ্যগুলির।