পলিঅ্যান্ড্রি বা পলিগ্যামি। অর্থাৎ মহিলা বা পুরুষের একাধিক যৌন সম্পর্ক। এই শব্দযুগল নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কারও মতে এটা খুবই স্বাভাবিক। কারও মতে, একাধিক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়াটা ঘোর অন্যায়। বিশেষ করে আমাদের সমাজে এটাকে অন্যায় বলেই দেখা হয়।
কিন্তু জানেন কি, এই ভারতেই এমন অঞ্চল রয়েছে, যেখানে আজও জীবিত রয়েছেন ‘দ্রৌপদী’রা! সেখানে পলিঅ্যান্ড্রিই হল সমাজের রীতি এবং সেই রীতি পালন করতে ঘটা করে এক তরুণীর সঙ্গে একই পরিবারের সমস্ত ভাইদের বিয়ে দেওয়া হয়!
হিমাচল প্রদেশের কিন্নর। কিন্নর ইন্দো-তিব্বতের সীমানার কাছে একটি জেলা। যে পলিঅ্যান্ড্রি বা মহিলাদের বহুবিবাহের কথা বলা হচ্ছে তা চালু রয়েছে এখানেই। আজকের দিনেও সেখানে রয়েছেন দ্রৌপদীরা।
মহাভারত অনুসারে, ১৩ বছরের জন্য রাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন পাণ্ডবরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তাঁরা নাকি তখন এই কিন্নরেই লুকিয়ে ছিলেন। সেই থেকেই নাকি এই অঞ্চলে মহিলাদের বহু বিবাহের প্রচলন।
ওই অঞ্চলের বহু কিন্নর তাই এখনও নিজেদের পাণ্ডবদের বংশধর বলে দাবি করেন। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ ইতিহাসবিদদের মতে, পাণ্ডবদের অনেক আগে থেকেই কিন্নরিদের উল্লেখ রয়েছে মহাভারতে।
এখানে একটি পরিবারে বিয়ে হয়ে আসা তরুণীকে একই সঙ্গে তাঁর স্বামীর অন্য ভাইদেরও বিয়ে করতে হয়।
বিয়ে করে আসার পর যতগুলো সন্তানের জন্ম তিনি দেবেন, তাদের প্রকৃত বাবার পরিচয়ের জন্য পুরো পরিবার ওই তরুণীর কথাতেই ভরসা রাখে। তবে প্রকৃত বাবা যিনিই হন না কেন, প্রতিটা সন্তান বড়ভাইকেই বাবা সম্বোধন করবে এবং বাকিদের কাকা। রীতি এমনটাই।
কিন্তু কেন এমন রীতি? এটা কি নিছকই মনগড়া? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রীতি আত্মস্থ করার পিছনে প্রচীন কিনৌরদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি একটা বড় কারণ।
পাহাড়ি, দুর্গম এলাকা হওয়ায় কিন্নরের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। প্রতিটা পরিবারেরই সম্বল ছিল নামমাত্র জমি। তা এতটাই কম ছিল, যে ভাইদের মধ্যে পরবর্তীকালে ভাগাভাগি হলে সে ভাগের জমি থেকে যা আয় হবে তাতে সংসার চালানো কার্যত অসম্ভব।
ইতিহাসবিদদের মতে, ছেলেদের বিয়ের পর জমি যাতে ভাগ না হয় সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ‘দ্রৌপদী’ প্রথার প্রচলন এই অঞ্চলে।
তবে শুধু কিন্নর নয়, ভারতের বেশ কিছু উপজাতির মধ্যে মহিলাদের বহু বিবাহ প্রথা চালু রয়েছে এখনও। দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার নীলগিরির টোডাস এবং উত্তর ভারতে মুসৌরি থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে জওনসর-বাওয়ার অঞ্চলের উপজাতিদের মধ্যেও এই রীতি দেখা যায়।
কিন্নরিদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আগের এখন অনেকটাই ভাল। পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। পলিঅ্যান্ড্রির চল তাই আগের থেকে এখন অনেকটাই কমেছে কিন্নরে।