লখনউয়ের হোটেলে মা এবং চার বোনকে খুন করেন আগরার যুবক। তার পর ভিডিয়ো করেন। ছবি: সংগৃহীত।
বর্ষবরণের রাতে পরিবারকে নিয়ে লখনউয়ের হোটেলে উঠেছিলেন আগরার যুবক। সেখানেই চার বোন এবং মাকে খুন করেন তিনি। পাঁচ প্রিয়জনকে খুনের পর ভিডিয়োবার্তায় ২৪ বছরের আরশাদ জানান, তাঁর এলাকায় জমি মাফিয়া এবং মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য। যে কোনও সময় বাড়ি দখল করে নিতে পারে মাফিয়ারা। মা-বোনদের বিক্রি করে দিত পাচারকারীরা। তাঁদের ‘বাঁচাতে মুক্তি’ দিয়েছেন (এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
মঙ্গলবার লখনউয়ের একটি হোটেলে উঠেছিলেন আরশাদ। হোটেলঘর থেকে আরশাদের মা আসমা এবং চার বোন— নয় বছরের আলিয়া, ১৯ বছরের আলিশা, ১৬ বছরের আকসা এবং ১৮ বছরের রেহমিনের দেহ পাওয়া যায়। পুলিশের কাছে আরশাদ স্বীকার করেছেন খুনগুলো সে-ই করেছে। এবং খুনে সাহায্য করেছেন তাঁর বাবা। কিন্তু কেন? প্রথমে উঠে এসেছিল সম্পত্তির বিবাদের কথা। কিন্তু খুনের পর ভিডিয়োবার্তায় ওই যুবক নির্বিকার ভঙ্গিতে জানান, কী ভাবে পাঁচ জনকে শ্বাসরোধ এবং হাতের শিরা কেটে মেরে ফেলেছেন। ভিডিয়োয় মা এবং বোনেদের নিথর দেখিয়ে আরশাদ বলেন, ‘‘পরিবারকে নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত (খুন) নিলাম প্রতিবেশীদের কারণে। তারা প্রতিনিয়ত আমার বোনেদের হয়রান করছে। তাই মা এবং বোনদের খুন করলাম।’’
কিন্তু প্রতিবেশীরা কেন হেনস্থা করবেন? সে জন্য কেনই বা মা এবং চার বোনকে খুন করতে হল? যুবকের দাবি, তাঁদের বাড়ি দখল করে নিতে চান প্রতিবেশীরা। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। ভিডিয়োবার্তায় আরশাদ বলেন, ‘‘গত ১৫ দিন এই ঠান্ডার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। ফুটপাথে রাত কেটেছে। এ ভাবে পরিবারের কাউকে আর কষ্ট পেতে দেব না। ওরা আমাদের বাড়ি দখল করে নিয়েছে। বাড়ির সব কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে।’’ এর পরে ধৃত যুবক যে মন্তব্য করেছেন তা আরও মারাত্মক।
আরশাদ তাঁর বোনদের এবং মাকে খুন করলেও তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন কয়েক জন প্রতিবেশীকে। ভিডিয়োয় তাঁদের নামও নেন যুবক। তিনি বলেন, ‘‘ওরা মাফিয়া। মেয়েদের বিক্রি করে। ওদের সঙ্গে লড়াই করতে পারব না। আমার বাবা এবং আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে ওরা। সব মিলিয়ে বাধ্য হয়ে আজ মা এবং বোনদের খুন করলাম আমরা।’’ মঙ্গলবার রাতে করা ভিডিয়োবার্তায় তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমি হয়তো (বুধবার) সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকব না। আমাকেও হয়তো মরতে হবে। কিন্তু আমরা অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। কেউ এগিয়ে আসেননি। আমরা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত বিচার পাব না জানি। ওদের সঙ্গে পুলিশ, নেতার খাতির আছে। আমাদের সঙ্গে কেউ নেই।’’
হোটেলে পাঁচটি দেহ উদ্ধার এবং যুবকের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে ডিসিপি লখনউ (সেন্ট্রাল) রবীনা ত্যাগী জানান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে। আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।