ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল (আইএনএলডি)-এর হরিয়ানার সভাপতি নফে সিংহ রাঠী। — ফাইল চিত্র।
হরিয়ানার বিরোধী দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল (আইএনএলডি)-এর নেতা নফে সিংহ রাঠীর খুনে ঘটনায় দায় স্বীকার করেছেন কপিল সাংওয়ান ওরফে নন্দু। ব্রিটেন কেন্দ্রিক গ্যাংস্টার কপিলের খোঁজ পেতে তৎপর পুলিশ। সূত্রের খবর, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ থেকেই এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন কপিল!
গত রবিবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় নিজের গাড়ির মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন আইএনএলডি নেতা নফে। শুধু তিনি একা নন, দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান তাঁর সঙ্গে থাকা আরও এক দলীয় কর্মী। আহত হন নফের তিন জন নিরাপত্তারক্ষী। হরিয়ানার ঝজ্জর জেলার একটি রেল ক্রসিংয়ের সামনে যখন নফের গাড়ি দাঁড়ায়, তখন আচমকাই তার পাশে একটি এসইউভি এসে থামে। তার পর সেই গাড়ি থেকেই অতর্কিতে হামলা চালানো হয় নফের উপর।
দিল্লি এবং হরিয়ানা পুলিশ যৌথ ভাবে এই খুনের ঘটনার তদন্ত করছে। তবে বিরোধীরা নফে খুনে সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, আইএনএলডি নেতা খুনের ঘটনায় কোনও গ্যাংস্টারের যোগ রয়েছে। তাঁর খোঁজে তিহাড় জেলে বন্দি একাধিক গ্যাংস্টারকে জেরা করে পুলিশ।
গত বুধবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে নফেকে খুন করার দায় স্বীকার করেন কপিল। কেন তিনি খুন করলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কপিলের চিরশত্রু মনজিৎ মহলের সঙ্গে সখ্যের কারণেই খুন হতে হল নফেকে। হরিয়ানা পুলিশ সেই পোস্টের সত্যতা যাচাই করেছে। পোস্টে একটি ছবিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মনজিৎ এবং নফে করমর্দন করছেন।
মনজিৎ এবং কপিলের মধ্যে শত্রুতার সূত্রপাত এক খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, কপিলের শ্যালককে খুন করেছেন মনজিৎ। তার পরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ২০১৭ সালে মনজিতের বাবা কৃষ্ণকে হত্যার অভিযোগ ওঠে কপিলের দলের বিরুদ্ধে। বুধবারের পোস্টে কপিল দাবি করেন, তাঁর শত্রুর সঙ্গে যিনি যোগ রাখবেন তাঁকেই প্রতিহিংসার মুখোমুখি হতে হবে। বাহাদুরগড়ের বিধায়ক থাকার সময় তিনি বহু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দাপটে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষা়ৎকারে দিল্লি পুলিশের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানান, তিহাড় জেলে বন্দি কপিলের দাদা জ্যোতি প্রকাশের নির্দেশেই নফেকে খুন করা হয়েছে। এই খুনের পিছনে প্রতিহিংসাই আসল কারণ।
২০১৪ সালে অপরাধ জগতে পা দেন কপিল। খুন, অপহরণ, তোলাবাজি— একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। ২০১৬ সালে রাজস্থানে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০২০ সালে প্যারোলে জেলের বাইরে আসেন। তার পরই দেশ ছেড়ে পালান কপিল। ‘জাল’ পাসপোর্ট বানিয়ে তাইল্যান্ড হয়ে প্রথমে দুবাই যান। বর্তমানে ব্রিটেনে রয়েছেন তিনি।
নফের খুনের পরই তাঁর পরিবারও হুমকি পেয়েছে বলে খবর। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, তাঁর দুই ছেলে অজানা নম্বর থেকে ফোন পেয়েছেন। ফোনে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন এই খুন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ না খোলেন। যদি তার অন্যথা হয়, তবে তাঁরাও বিপদে পড়বেন। হুমকি ফোনের খবর পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।