গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কুণাল ঘোষের এক্স হ্যান্ডলের একটি পোস্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আলোচনা শুরু হয়েছিল শাসক তৃণমূলে। কিন্তু শুক্রবার সকাল হতে না-হতে সেই আলোচনা ঝড়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে! শুক্রবার দেখা গিয়েছে, এক্স হ্যান্ডলের বায়ো থেকে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজনীতিকের পরিচয়টাই মুছে দিয়েছেন কুণাল। এখন তিনি শুধুই ‘সাংবাদিক আর সমাজকর্মী’। যা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে জল্পনা এবং আলোচনা আরও দানা বেঁধেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে এক্সে পোস্ট করে কুণাল লিখেছিলেন, ‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বারবার হতে পারে না।’ সেই পোস্টে কুণাল কারও নাম করেননি। ফলে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, কাকে ইঙ্গিত করছেন কুণাল? তৃণমূলের অন্দরে অনেকের বক্তব্য ছিল, কুণালের ওই পোস্ট উত্তর কলকাতার নেতা এবং রাজনীতিকে ঘিরে। আরও একটু বেশি ‘সাহসী’রা বলছিলেন, কুণালের বৃহস্পতিবার রাতের পোস্ট আদতে উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। নাম না-করে তিনি সুদীপের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। কারণ, সুদীপ এবং কুণালের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে অজানা নয়।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, আগামী ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেডের প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কলকাতার নেতাদের একটি বৈঠক ডেকেছিলেন সুদীপ। সেখানে ডাক পাননি কুণাল। তাতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। অনেকের মতে, সেই কারণেই তিনি বৃহস্পতিবার রাতের পোস্টটি করে থাকতে পারেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা কেউই স্বীকার করছেন না।
তবে শুক্রবার সকালে কুণালের এক্স বায়োর ‘বদল’ অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই অভিমত অনেকের। কুণালের ঘনিষ্ঠদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতের পোস্ট আপাতদৃষ্টিতে বিস্ফোরক হলেও সাধারণ এবং প্রত্যাশিত বিষয়। কিন্তু এক্স বায়ো বদলের পিছনে আরও বড় কারণ রয়েছে।
ওই বদল নজরে আসার পর কুণালের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তাঁর এক্স বায়োর বদল নিয়ে বিবিধ প্রশ্ন আসবে বলেই আপাতত ফোন বন্ধ রেখেছেন কুণাল। তিনি যখন নিজে কিছু বলতে চাইবেন, তখনই ফোন খুলবেন। এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকের মতে, নাম না-করে সুদীপ সম্পর্কে যে পোস্ট তিনি বৃহস্পতিবার রাতে করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে দলের শীর্ষমহল থেকে কিছু বলা হয়ে থাকতে পারে। তার পরেই ‘অভিমানাহত’ কুণাল বায়ো পরিবর্তন করেছেন। যেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অতঃপর তিনি শুধুই সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী। রাজনৈতিক কর্মী বা দলের মুখপাত্র নন। মুখপাত্রের সঙ্গে কুণাল তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদকের পদেও রয়েছেন। এখন দেখার, সেই পদও তিনি ছেড়ে দেন কি না। তা হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যাবে।
সারদা মামলায় দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকার পরেও রাজ্য রাজনীতিতে কুণালের ফিরে আসাকে অনেকেই ক্রিকেটের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাম ব্যাক’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। ফিরে আসার পরে কুণাল গত কয়েক বছর ধরে শাসকদলে ‘অপ্রতিরোধ্য’ থেকেছেন। বস্তুত, যে কুণালের মুখ বন্ধ করার জন্য একটা সময়ে প্রিজন ভ্যানের টিন পেটাত পুলিশ, এখন সেই কুণালকেই তারা ‘স্যর’ বলে সম্বোধন করে। নবীন-প্রবীণ, মমতা-অভিষেক নানাবিধ বিষয়ে কুণাল সবসময় খোলামেলা কথা বলেছেন। কোনও ঢাকঢাক গুড়গুড় করেননি। মাঝে কিছু দিনের জন্য দল তাঁকে ‘সেন্সর’ও করেছিল। তার পরে আবার স্বমহিমায় ফিরেছিলেন কুণাল। কিন্তু দলের সঙ্গে মন কষাকষির সময়েও কখনও দেখা যায়নি সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে নিজের পরিচয় মুছে দিচ্ছেন কুণাল। সে দিক থেকে এ বারের ঘটনা ‘নজিরবিহীন এবং অর্থবহ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে রাজনীতিতে কোনও কিছুই চূড়ান্ত নয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও সন্দেশখালি-সহ কুণাল বিবিধ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে। শুক্রবার সকালে সেটাই উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁর এক্স বায়ো থেকে। বেলা গড়ালে পরিস্থিতি কী হবে, তা তৃণমূলের অন্দরের লোকজনও খুব একটা বলতে পারছেন না বা বলতে চাইছেন না। মুখ খুলছেন না কুণালও।