প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার সকালে জোশীমঠের স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। ছবি: পিটিআই ।
জোশীমঠে ভাঙাভাঙির কাজ নিয়ে মঙ্গলবার সারা দিনের হইচইয়ের পর বুধবার তড়িঘড়ি ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল প্রশাসন। জোশীমঠের ফাটল ধরা যে হোটেল এবং বাড়িগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তাদের মালিকদের প্রাথমিক ভাবে দেড় লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক কর্তা হিমাংশু খুরানা বলেন, ‘‘প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে দে়ড় লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।’’
ভূমিধসের কারণে গাড়োয়াল হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ জোশীমঠে ৭০০-র বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং দু’টি হোটেল। সেই বাড়িগুলিতে প্রশাসনের তরফে লাল কালি দিয়ে ‘ক্রস’ চিহ্ন করে পরিবারগুলিকে বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, বিপজ্জনক এই ভবনগুলি ভেঙে ফেলা হবে। পাশাপাশি হেলে পড়া দু’টি বিলাসবহুল হোটেল ‘মালারি ইন’ এবং ‘মাউন্ট ভিউ’-কেও ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
বিপজ্জনক এই ভবনগুলি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের কথা জানাতেই ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাস্তায় নামেন বাড়ি এবং হোটেলের মালিকরা। পথ অবরোধ করে ভাঙাভাঙির কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বাড়ি ভাঙতে আসার আগে তাঁদের কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি সরকারের তরফে কোনও ক্ষতিপূরণের জানানো হয়নি বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। তাঁদের দাবি ছিল, প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা না জানানো হলে তাঁরা নিজেদের ভিটে ছেড়ে এক পা-ও নড়বেন না। এমনকি, ক্ষতিপূরণ না পেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন ‘মালারি ইন’-এর মালিক ঠাকুর সিংহ রানা।
এর পরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার সকালে বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। বৈঠক শেষে প্রাথমিক ভাবে এই দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় হিমাংশু বলেন, ‘‘আমরা হোটেলগুলি এখনই ভেঙে ফেলছি না। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হোটেল ভেঙে ফেলা হবে। হোটেল মালিকদের সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’’
প্রশাসনের আরও এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। হোটেলগুলি ভেঙে ফেলার কাজ সিবিআরআই (সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) এর তত্ত্বাবধানে করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বিগত কয়েক দিনে জোশীমঠের ৭৩১টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চওড়া চওড়া ফাটল দেখা গিয়েছে সেই শহরের রাস্তা-মন্দির-জমিতে। মাটির তলা থেকে উঠে আসছে অদ্ভুত সব শব্দ। আর সেই আতঙ্কেই রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়া সেই শহরের বহু মানুষ। ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩১টি পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। জোশীমঠকেও বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার।