র্যাট সাইবর্গ। শত্রুদের ধ্বংস করতে রিমোট চালিত এই ইঁদুর বাহিনী তৈরি করছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। ডিআরডিও-র অ্যাসিমেট্রিক টেকনোলজিস ল্যাবের তরফে এই ইঁদুর বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে।
লুকিয়ে থাকা সৈন্যদের সঠিক ঠিকানা খুঁজে বার করতে সাহায্য করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই ইঁদুর বাহিনী। ইঁদুরের গায়ে থাকা ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে শত্রুদের ঠিকানা পৌঁছে যাবে ভারতীয় সেনার হাতে। আর তার পরই খেল খতম!
‘টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া’র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরেরও আগে এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে ডিআরডিও। বর্তমানে এই প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রকল্পের কাজ সফল ভাবে অনেক দূর এগিয়েছে।
১০৮তম ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি অধিবেশনে ‘র্যাট সাইবর্গ’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। উপস্থাপন করেন ডিআরডিও ইয়ং সায়েন্টিস্ট ল্যাবরেটরি অ্যাসিমেট্রিক টেকনোলজিসের ডিরেক্টর পি শিবপ্রসাদ।
‘র্যাট সাইবর্গ’ আসলে কী? একটি প্রাণীর শরীরে উন্নত বৈদ্যুতিন যন্ত্র লাগিয়ে সেই প্রাণীকে অতিরিক্ত অথচ নির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হলে সেই প্রাণী হয়ে ওঠে সাইবর্গ।
‘র্যাট সাইবর্গ’-এর ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরে বৈদ্যুতিন যন্ত্র লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঁদুর। শরীরে লাগানো থাকবে একাধিক তার এবং যন্ত্রাংশ।
অস্ত্রোপচারের পর ইঁদুরের শরীরের এই পরিবর্তন তাদের প্রাকৃতিক ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে দাবি করা হয়েছে। এই আধা যান্ত্রিক ইঁদুর এমন সব কার্যকলাপ করতে পারবে যা সাধারণ ইঁদুরের পক্ষে করা সম্ভব হবে না।
মূলত সামরিক, অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের কাজে সাইবর্গ প্রাণী ব্যবহার করা হয়। একই কাজে লাগানো হবে ‘র্যাট সাইবর্গ’-কেও।
ভারতে ‘র্যাট সাইবর্গ’ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ইঁদুরের শরীরে ‘ইলেকট্রোড’ স্থাপন করা হয়েছিল।
কোনও রকম শারীরিক ক্ষতি না করেই ইঁদুরের মাথায় ওই যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের কারণে ইঁদুরের শরীরে কিছু অস্বস্তি দেখা গেলেও শীঘ্রই তা ঠিক হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ডিআরডিও-র এক জন বিজ্ঞানী।
কী ভাবে কাজ করবে ‘র্যাট সাইবর্গ’? এই ইঁদুরের মাথায় লাগানো ওই যন্ত্র তাদের মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠায়। স্নায়ুতন্ত্রে পাঠানো সঙ্কেত পেয়ে ইঁদুরগুলি নির্দিষ্ট দিকে চলাফেরা করতে বা দৌড়তে পারে।
চলতে চলতে ইঁদুরটি যদি থেমে যায় বা সঙ্কেত পেতে অসুবিধা হয়, তা হলে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমেও চালনা করা যেতে পারে এদের।
কিন্তু কেন এই প্রকল্পের জন্য ইঁদুরকেই বেছে নেওয়া হল? প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবর্গ তৈরির জন্য ইঁদুরকে বেছে নেওয়ার কারণ হল— তারা দ্রুত দৌড়তে পারে, মাটির গভীর পৌঁছতে পারে, সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠতে পারে, এমনকি বর্জ্য পদার্থের উপরও দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, গ্রামের তুলনায় শহরে ‘র্যাট সাইবর্গ’ বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশে ইঁদুর ছাড়াও আরও অনেক সাইবর্গ প্রাণী তৈরি করা হয়েছে। চিনের মতো দেশও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সাইবার্গ প্রাণী ব্যবহার করে।
বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ওয়ারড্’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে আমেরিকার বায়ুসেনা সাইবর্গ মৌমাছি কাজে লাগিয়েছিল।
এর আগে আমেরিকার ‘দর্প’ প্রকল্পে, অনুসন্ধানের কাজে ‘র্যাট সাইবর্গ’ কাজে লাগানো হয়েছিল। এ ছাড়াও সামরিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য যন্ত্র লাগানো পোকামাকড় তৈরিতেও বিনিয়োগ করেছে আমেরিকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যা প্রশিক্ষিত ডলফিনকে জলের নীচে খনি খুঁজে বার করতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন দেশ সাইবর্গ প্রাণী তৈরির কাজে মন দিলেও প্রাণী অধিকার কর্মীরা বার বার এর নিন্দা করে এসেছেন। সাইবর্গ প্রাণী তৈরির নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।