আল কায়েদা জঙ্গি। -ফাইল ছবি।
কখনও তালিবান। কখনও বা জইশ-ই-মহম্মদ। আবার কখনও আল কায়দা। পাকিস্তান আর তার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এখন একের পর এক তাস ব্যবহার করতে চাইছে যে ভাবে হোক কাশ্মীরকে ভারত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। কাবুলের তখত তালিবরা দখল করার পর থেকেই পাকিস্তানের সেই উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে। এমনই অভিযোগ করছে দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ কথা জানিয়েছে।
সূত্রের খবর, পাকিস্তান যে রীতিমতো কলকাঠি নাড়ছে, তার সেরা প্রমাণ মিলেছে গত ৩১ অগস্ট মধ্যরাতে আমেরিকার শেষ সেনা আফগান ভূখণ্ড ত্যাগ করার পরপরই। তালিবরা আফগানিস্তানে ফিরে আসার পর বিশ্বের যে সব জায়গায় ‘ইসলামি ভূখণ্ড অন্যের দখলে রয়েছে’, সেগুলিকে অবিলম্বে মুক্ত করার জন্য ‘পৃথিবীজুড়ে জিহাদ’-এর ডাক দিয়ে একটি বিবৃতি দেয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল কায়দা। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই বিবৃতিতে কিছু রদবদল করা হয়। ঢোকানো হয় কাশ্মীরকে। আর বাদ দেওয়া হয় রাশিয়ার হাতে থাকা ‘ইসলামি ভূখণ্ড’ চেচনিয়া ও চিনের মানচিত্রে থাকা মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ড শিনজিয়াঙের নাম।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষস্তরের কর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, “আল কায়দার বিবৃতিতে যে জিহাদ-এর ডাক দেওয়া হয়েছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। আরও চিন্তার কারণ, তালিবরা এর আগে কখনওই তাদের এজেন্ডায় কাশ্মীরকে না রাখলেও আল কায়েদার বিবৃতি শুধরে নিয়ে এ বার ভারতের সেই উপত্যকার নাম ঢোকানো হয়েছে। এটা স্পষ্ট, আল কায়দার এই বিবৃতির পিছনে পাকিস্তানের আইএসআই-এর হাত রয়েছে।” সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এর ফলে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সক্রিয় দু’টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের হাত শক্ত হবে। ভারতকে আক্রমণে তারা আরও উৎসাহিত হবে, আরও শক্তি পাবে।
আল কায়দার পরে শুধরে নেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলামের শত্রুদের কবল থেকে সোমালিয়া, লেভ্যান্ট, ইয়েমেন, কাশ্মীর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামি ভূখণ্ড উদ্ধার করতে হবে। মুক্ত করতে হবে। সেগুলিকে পুনর্দখল করতে।”
বিবৃতিটি ফের খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ কর্তা বলেছেন, “আল কায়দা গোটা বিশ্বের মুসলিমদের উস্কে দিতে চাইছে। এটা সভ্যতার পক্ষে খুব বিপজ্জনক। পাকিস্তানও তার এজেন্ডাকে (কাশ্মীর দখল) এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে পুরোদমে। আল কায়দার প্রধানের পদে আয়মান আল জাওয়াহিরিকে বসানো ও তাঁর উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে চলার পাক প্রচেষ্টাও ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
সরকারি সূত্রের আরও বক্তব্য, আগে তো নয়ই, তালিবরা এ বার ক্ষমতায় ফেরার পরেও কাশ্মীর নিয়ে মুখ খোলেনি। অথচ গত কয়েক দিনে দেখা গিয়েছে দু’টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হরকত-উল-আনসার-কে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিচ্ছে কাশ্মীরে তাদের জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে তারা পাকিস্তানকেও আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিচ্ছে।
আরও একটি বিষয়ের উপরেও কেন্দ্রীয় সরকার নজর রাখছে বলে পদস্থ কর্তাটি জানিয়েছেন। সেটি হল-শিয়াপ্রধান মুসলিমদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ইরানেই সুন্নি গোষ্ঠীর হাতে থাকা আল কায়দার বেশির ভাগ জঙ্গি আর তাদের পরিবার আশ্রয় পাচ্ছে? কর্তাটির কথায়, “ইতিহাস অবশ্য আগেও দেখিয়েছে, কৌশলগত ক্ষেত্রে শিয়া আর সুন্নি একে অন্যের বিরুদ্ধে অন্তত অস্ত্র ধরে না, একেবারে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে না দিলেও।”