হাসপাতালে সুলভের দেহ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
রাজ্যে মদ মাফিয়ার দৌরাত্ম্য ফাঁস করার পর উত্তরপ্রদেশে রহস্য মৃত্যু সাংবাদিকের। যদিও পুলিশের দাবি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই সাংবাদিকের। তবে দুর্ঘটনার তত্ত্ব মানতে নারাজ নিহত সাংবাদিকের পরিবার এবং সহকর্মীরা। তাঁদের দাবি, প্রাণ সংশয় রয়েছে বলে মৃত্যুর আগের দিনই পুলিশকে চিঠি দিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তার মধ্যেই এই ঘটনা।
নিহত সাংবাদিকের নাম সুলভ শ্রীবাস্তব। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ কাজ সেরে ফেরার সময় উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, একটি ইটভাঁটার পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন সুলভ। সেই সময় রাস্তার পাশের টিউবওয়েলে ধাক্কা মারে মোটরসাইকেলটি। ছিটকে মাটিতে পড়ে যান তিনি। ইটভাঁটার শ্রমিকরাই তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ইটভাঁটার শ্রমিকরাই সুলভের ফোন থেকে তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানিয়েছেন প্রতাপগড়ের পুলিশ আধিকারিক সুরেন্দ্র দ্বিবেদী। তবে দুর্ঘটনা ছাড়াও সুলভের মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে পুলিশের দাবি মানতে নারাজ সুলভের সহকর্মীরা। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনাস্থে সুলভের যে ছবি প্রথম তোলা হয়, তাতে দেখা তাঁর মুখে গভীর ক্ষত দেখা গিয়েছে। গায়ে জামা প্রায় ছিলই না। পরনের প্যান্টের বোতাম খোলা ছিল এবং কোমর থেকে নামানো ছিল। মৃত্যুর আগের দিন পুলিশকে যে চিঠি লিখেছিলেন সেটিও নেটমাধ্যমে তুলে ধরেছেন প্রতাপের সহকর্মীরা।
ওই চিঠিতে প্রতাপ লেখেন, ‘৯ জুন মদ মাফিয়াকে নিয়ে আমার একটি রিপোর্ট চ্যানেলে দেখানো হয়। ওয়েব পোর্টালেও প্রকাশিত হয় সেটি। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পডে় গিয়েছে। কিন্তু রিপোর্টটি সামনে আসার পর বাড়ি বাইরে পা রাখলেই বুঝতে পারছি কেউ বা কারা আমার পিছু নিচ্ছে। নিজের সূত্রদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, মদ মাফিয়ারা আমার উপর চটে রয়েছে। আমার ক্ষতি করতে চাইছে ওরা। আমার পরিবারও এ নিয়ে চিন্তিত।’
সুলভ যে সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন, তাদের তরফেও স্থানীয় পুলিশকে সুলভের নিরাপত্তায় জোর দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পুলিশ গা করেনি বলে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে তুলোধনা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতান্ত্রিক এবং মুক্ত নীতেযে দেশের শিকড়ের সঙ্গে গেঁথে, সেখানে সত্য উদ্ঘাটন করতে যাওয়া সাংবাদিকের মৃত্যু দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আলিগড় থেকে প্রতাপগড় পর্যন্ত তাণ্ডব চালাচ্ছে মদ মাফিয়া। কিন্তু সরকার টুই শব্দটি করছে না। সাংবাদিকরা বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশ করছেন, প্রশাসনকে বিপদের আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। কিন্তু সরকার ঘুমোচ্ছে। জঙ্গলরাজকে লালন পালন করছে যে সরকার, তার কাছে সুলভ শ্রীবাস্তবের পরিবারের চোখের জলের কোনও জবাব আছে কি?’ তবে বিরোধীরা সরব হলেও, রাজ্য সরকারের তরফে নিহত সাংবাদিককে নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।