দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
আবগারি ‘দুর্নীতি’ মামলায় পর পর ন’বার সমন পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল ইডি। কিন্তু তিনি প্রতি বারই হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে অরবিন্দকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। দিল্লি হাই কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল ইডি। সেখানে দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর অরবিন্দকে গ্রেফতার করা হয়। পদে থাকাকালীন এই প্রথম দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। অরবিন্দের গ্রেফতারির পর রাজধানীতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাঁর দল আম আদমি পার্টির দাবি, পদত্যাগ করছেন না অরবিন্দ।
দিল্লিতে আপ সরকারের আমলে আবগারি নীতি বদলে ফেলে কয়েকটি সংস্থাকে বেআইনি ভাবে সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। গত বছরই বিতর্কিত এই আবগারি নীতি বাতিল করার কথা ঘোষণা করে দিল্লির আপ সরকার। তার আগেই এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে দিল্লির তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া এবং সাংসদ সঞ্জয় সিংহের। পরে অরবিন্দের নামও জড়ায় এই মামলায়।
আপ অবশ্য শুরু থেকেই একে বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে চিহ্নিত করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আপের দাবি, বিরোধীদের দমন করতে এমন মনগড়া সব অভিযোগ নিয়ে নেতৃত্বকে হেনস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। প্রসঙ্গত, এই মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে সিসৌদিয়া এবং চলতি মাসে সঞ্জয়কে গ্রেফতার করা হয়।
গত বছর থেকেই আবগারি মামলায় অরবিন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠাচ্ছিল ইডি। প্রতি বারই তিনি হাজিরা এড়িয়েছেন। আট বার হাজিরা এড়ানোর পর নবম হাজিরার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। এর আগে আবগারি মামলাতেই রক্ষাকবচ চেয়ে দিল্লির নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন অরবিন্দ। সেখানে তাঁর রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুরও করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার নবম হাজিরার দিন অরবিন্দ ইডি দফতরে না গিয়ে সরাসরি দিল্লির উচ্চ আদালতে যান। সেখানে নতুন করে রক্ষাকবচের দাবি জানান।
কিন্তু দিল্লি হাই কোর্ট অরবিন্দের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালতে পেশ করা আবেদনে অরবিন্দ বলেছিলেন, “ইডি নিশ্চয়তা দিক যে, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না।” আপের অভিযোগ, ইডির লক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এত দিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুরেশকুমার কাইত এবং বিচারপতি মনোজ জৈনের ডিভিশন বেঞ্চে কেজরীওয়ালের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা এই পর্যায়ে মামলাকারীকে কোনও সুরক্ষা দিচ্ছি না।’’ হাই কোর্ট রক্ষাকবচ না দেওয়ার পরেই তৎপর হয় ইডি। রাতেই ১২ জন ইডি আধিকারিকের দল পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। তল্লাশি অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়েই তারা বাড়িতে ঢোকে। ঘণ্টাদুয়েক তল্লাশি চালানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর মোবাইল ফোন। অরবিন্দকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
সন্ধ্যাতেই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অরবিন্দ। জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি জানান। তার পর রাত ৯টার পর মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে ইডি। শুক্রবার তাঁকে দিল্লির পিএমএলএ আদালতে হাজির করানো হবে। দেশের ইতিহাসে অরবিন্দই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন। কিছু দিন আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করে ইডি। জমি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গত ৩১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে হেমন্ত রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পর ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। ফলে অরবিন্দের মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন হেমন্ত গ্রেফতার হননি।