বাঁদিকে ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং ডান দিকে কুমারী শৈলজা। —ফাইল ছবি।
‘আপ যতগুলি আসন চাইছে, তা দিতে গেলে কংগ্রেসের ক্ষতি হবে।’’ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালের সঙ্গে আপ সাংসদ রাঘব চড্ডার হরিয়ানা বিধানসভায় আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এ কথা বলেছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। মঙ্গলবার গণনার ফল বার্তা দিল, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে হরিয়ানায় বিজেপির মোকাবিলায় সামান্য হলেও সুবিধা পেত কংগ্রেস।
আসন সংখ্যায় বিজেপির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও ফল ভোট শতাংশের হিসাবে তুল্যমূল্য কংগ্রেস। সে রাজ্যে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দলের ঝুলিতে গিয়েছে সাড়ে ৩৯ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট। বিজেপির প্রায় শতাংশ। আপ দেড় শতাংশের বেশি। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সামাজিক সমীকরণ এবং ‘বুথ লেভেল ম্যানেজমেন্ট’-এ বিজেপির দক্ষতা আঁচ করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সেপ্টেম্বরের গোড়ায় দলের জাতীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে আপের সঙ্গে আসন সমঝোতার উপর জোর দিয়েছিলেন দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সায় দিয়েছিলেন সাংসদ কুমারী শৈলজা, এআইসিসির মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতো নেতারাও।
কিন্তু একদা কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী’ জি-২৩-এর সদস্য হুডা কোনও অবস্থাতেই সমঝোতা চাননি। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ১০টি আসন চেয়েছিল আপ। শেষ পর্যন্ত আপের তরফে আটটি আসন চাওয়া হলেও তা দিতে রাজি হননি, হরিয়ানার বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হুডা। আপের ভোট যুক্ত হলে বিশেষত, দক্ষিণ হরিয়ানার গুরুগ্রাম, ভিওয়ানি-মহেন্দ্রগড়ের মতো এলাকায় কংগ্রেসের সুবিধা হত বলে মনে করছে দলের একাংশ। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরে নাম না করে হুডাকে নিশানা করেন দলিত নেত্রী শৈলজা। বলেন, ‘‘আমাদের বড় বিপর্যয় ঘটেছে। হারের আসল কারণগুলি আমাদের খুঁজে বার করতে হবে। প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া থাকা সত্ত্বেও কোন কোন ভুলে হারতে হল, খতিয়ে দেখতে হবে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় সমঝোতা করেছিল কংগ্রেস এবং আপ। সে রাজ্যের ১০টি আসনের মধ্যে একটি কেজরীকে ছেড়ে ন’টিতে লড়েছিল রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। তার মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছিলেন ‘হাত’ প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি পাঁচটি গিয়েছিল ‘পদ্মে’র ঝুলিতে। অথচ ২০১৯ সালে ১০টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। ২০১৪-য় জিতেছিল পাঁচটিতে। ওই দুই বছরের বিধানসভা ভোটেও জয়ী হয়েছিল পদ্ম। এ বার বুথফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলল বিজেপি।
এই ফলের জন্য হুডাকে দুষছেন কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, দলের অন্দরে তাঁর ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত শৈলজা এবং সুরজেওয়ালার অনুগামীদের বিন্দুমাত্র জায়গা ছাড়েননি হুডা। ফলে বহু আসনেই কংগ্রেসে বিক্ষুব্ধেরা গোঁজ প্রার্থী হয়েছিলেন। তা ছাড়া গত এক দশকে হুডার সঙ্গে মতবিরোধের কারণে দল ছেড়েছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ঐতিহ্যগত ভাবে প্রভাবাশালী কংগ্রেস পরিবারের সদস্য। তিন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যেরা রয়েছেন এই তালিকায়— বংশীলালের পূত্রবধূ প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণ চৌধুরী এবং তাঁর কন্যা শ্রুতি, ভজনলালের পুত্র কুলদীপ বিশনই, রাও বীরেন্দ্র সিংহের পুত্র ইন্দ্রজিৎ (বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী)।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য চৌধরি বীরেন্দ্র সিংহ, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক তনওয়ার হুডার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে বিজেপিতে যোগ দিলেও বিধানসভা ভোটের আগে রাহুলের উদ্যোগে দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু ফল বলছে, তাতে লাভ হয়নি বিশেষ। চলিত বছরের মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। আগামী বছরের গোড়ায় দিল্লিতে। ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের একাংশের মতে হরিয়ানার ভোটের ফল জোটের অন্দরে কংগ্রেসের দর কষাকষির ক্ষমতা কমিয়ে দিল।